গোনা করতেন সেকালকার নামকরা বড় বড় সাহিত্যিকরা। রোদ প’ড়ে এলে গুরুদাসবাবু পুস্তকালয়ের বাইরে আসতেন। ফুটপাথের উপরে পাতা থাকত একখানি বেঞ্চি। তারই উপরে আসীন হয়ে তিনি আলাপ করতেন সমাগত সাহিত্যিকদের সঙ্গে। গুরুদাসবাবু যখন বৃদ্ধ ও দৃষ্টিশক্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তখনও তিনি ছাড়তে পারেননি এই পূর্ব-অভ্যাসটি। বড় বড় সাহিত্যিকদের সঙ্গে চোখের দেখা হবে, এই লোভে বালক ও কিশোর বয়সে প্রায়ই আমি গুরুদাস লাইব্রেরীর সামনে দিয়ে আনাগোনা করতুম। তখন সাহিত্যিকদের ভাবতুম, ভিন্ন জগতের বিস্ময়কর মানুষ। এখন মনের মধ্যে এমন মহাপুরুষার্চনের ভাব জাগ্রত হয় কদাচ। এখন জেনেছি, অধিকাংশ তথাকথিত সাহিত্যিকই হচ্ছেন রাম-শ্যামের মতই সাধারণ মানুষ। উপরন্তু কোন কোন নামজাদা সাহিত্যিকের চেয়ে অনামা রাম-শ্যামের সঙ্গ অধিকতর প্রীতিপ্রদ ও নিরাপদ।
পরে গুরুদাস লাইব্রেরীর মত এম. সি. সরকারের পুস্তকালয়ও পরিণত হয়েছিল সাহিত্যিকদের মিলন-ক্ষেত্রে। কেবল “ভারতী”র দলের নয়, “কল্লোলে"র দলের সাহিত্যিকরাও সেখানে এসে আসর জমিয়ে তুলতেন। নজরুল, অচিন্ত্যকুমার, প্রেমেন্দ্র, বুদ্ধদেব ও নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ প্রভৃতির সঙ্গে তো আগেই পরিচিত হয়েছিলুম, ওঁদের অন্যান্য সহযাত্রীর মধ্যে জসীমউদ্দীন, হুমায়ূন কবীর, অজিত দত্ত, ভূপতি চৌধুরী ও হেমচন্দ্র বাগচীর সঙ্গে প্রথম আলাপ হয় এম. সি. সরকারের পুস্তকালয়েই। কেবল “ভারতী”র ও “কল্লোলে”র দলের নয়, অন্যান্য বহু বিখ্যাত ব্যক্তিও ওখানে আনাগোনা করতেন বা এখনো করেন—যেমন স্বর্গীয় ডক্টর সতীশচন্দ্র বাগচী, স্যর যদুনাথ সরকার, শ্রীরাজশেখর বসু ও শ্রীশিশিরকুমার ভাদুড়ী প্রভৃতি। এ জায়গাটি ছিল প্রবীণ ও নবীনদের কলাকেলির আসর।
“কল্লোলে”র আর একজন নিয়মিত লেখক হচ্ছেন শ্রীসুরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি সম্পর্কে শরৎচন্দ্রের মাতুল এবং সাহিত্যশিষ্য। শরৎচন্দ্রের লেখা গল্প “মন্দির” প্রকাশিত হয় ১৩০৯ সালের “কুন্তলীন পুরস্কার” নামক বার্ষিক গ্রন্থে। কিন্তু গল্পটি তিনি চালিয়ে দিয়েছিলেন সুরেন্দ্রনাথেরই নামে। তিনি কলকাতার লোক
২৬৯