পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ইনি, উনি, তিনি

অন্যান্য রচনাও আছে। আর একজন হচ্ছেন শ্রীভূপতি চৌধুরী। “কল্লোল” দলভুক্ত গল্পলেখক। লেখক হিসাবে এঁরা দুইজনেই সাহিত্যক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে যেতে পারতেন। কিন্তু মণীন্দ্রলাল ব্যারিষ্টার এবং ভূপতি বাস্তুকার হয়ে এখন লক্ষ্মীর ঝাঁপি থেকে অল্পবিস্তর হস্তগত করবার জন্যে এতই ব্যস্ত হয়ে আছেন যে, সরস্বতীর মুখ দেখবার ফুরসত পান না। এবং এই দলের লোক ব’লেই গণ্য করতে পারি হুমায়ূন কবীর ও শ্রীমণীশ ঘটককেও। তাঁদেরও বোধ হয় আর বাংলা সাহিত্যের স্বপ্ন দেখবার অবসর নেই।

 সব বীজে চারা জন্মায় না। কিন্তু চারা দেখা দিয়ে বড় হয়ে দু-একবার রঙিন ফুল ফুটিয়ে যদি ফুল ফুটানোর পালা অসময়েই সাঙ্গ ক’রে দেয়, তাহলে মনে থাকে না আক্ষেপের অবধি। পুষ্পিত হ’তে পারি, কিন্তু পুষ্পিত হব না। শক্তি আছে, কিন্তু শক্তিকে রাখব শ্রমবিমুখ ক’রে। এই রীতি অনুসারে চললে শিল্পী কেবল নিজের উপরে নয়, অবিচার করেন শিল্পের উপরেও।

 বাংলা সাহিত্যে এই শ্রেণীর দুর্ঘটনা আরো দুইবার ঘটতে ঘটতে ঘটেনি। প্রমথ চৌধুরী জীবনের পূর্বার্ধে “বীরবল” নামের আড়ালে থেকে কালেভদ্রে দুই একটি প্রবন্ধ রচনা করতেন কথ্য ভাষায়। একে তো সেকালকার অতিশয় সাধু সাহিত্যিকরা কথ্যভাষাকে সুপথ্য ব’লে বিবেচনা করতেন না, তার উপরে ন-মাসে ছ-মাসে প্রকাশিত সেই রচনাগুলির ভিতরে প্রভূত মুনসীয়ানা থাকলেও সেগুলিকে মনে করা হ’ত চুটকি জিনিস বা ফালতো মাল। বীরবল যদি লেখাচ্ছলে কালি ছড়িয়ে সেই পর্যন্ত এগিয়েই থেমে যেতেন তাহলে স্থায়ী সাহিত্যের মজলিসে কল্‌কে পেতেন না নিশ্চয়ই।

 সৌভাগ্যক্রমে স্বর্গীয় মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায় হঠাৎ তাঁর স্কন্ধে চাপিয়ে দিলেন “সবুজ পত্রে”র ভার। সবুজের সংস্পর্শে এসে প্রৌঢ় প্রমথ চৌধুরীরও চিত্ত হয়ে উঠল শ্যামল। মেতে উঠলেন তিনি এক নূতন অনুপ্রাণনায়, ভূরি পরিমাণ রচনায় রচনায় ছেয়ে দিলেন “সবুজ পত্র”কে। কথ্যভাষার আসন প্রতিষ্ঠিত করলেন বাংলা সাহিত্যের দরবারে, এমন কি নিজের পক্ষে টেনে আনলেন

২৭১