রবীন্দ্রনাথকেও এবং তিনিও অবলম্বন করলেন কথ্যভাষা। সবাই পেলে প্রমথ চৌধুরীর সম্যক পরিচয়। জানলে তিনি কেবল উচ্চশ্রেণীর শিল্পী ও প্রথম শ্রেণীর প্রবন্ধকার নন, সেই সঙ্গে শ্রেষ্ঠ কবি ও গল্পলেখকও।
শরৎচন্দ্র সতেরো বৎসর বয়স থেকেই সাহিত্যচর্চা আরম্ভ করেন। গল্পের পর গল্প, উপন্যাসের পর উপন্যাস লিখে যান। তাঁর ‘বড়দিদি’, ‘চন্দ্রনাথ’ ও ‘দেবদাস’ প্রভৃতি সেই প্রথম যুগেরই রচনা। সে সব রচনা তখনকার মত পাণ্ডুলিপির আকারেই অপ্রকাশিত থাকে। তারপর লেখার পাট তুলে দিয়ে তিনি রেঙ্গুণে গিয়ে করেন কেরাণীগিরি। প্রায় এক যুগ পর্যন্ত কেটে যায়। এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অখ্যাত ও অনাদৃত হয়ে তিনি হয়তো কেরাণীগিরি করেই কাটিয়ে দিতেন। পরে তাঁর আত্মীয়-বন্ধুরা অপ্রকাশিত ও অপেক্ষাকৃত কাঁচা রচনাগুলি ছাপিয়ে দিলেও শরৎচন্দ্রের নাম এমন অনন্যসাধারণ হ’তে পারত না।
কিন্তু তা হবার নয়। বন্ধুবান্ধবের বিশেষ পীড়াপীড়িতে এবং “যমুনা” সম্পাদক ফণীন্দ্রনাথ পালের নির্বন্ধাতিশয়ে শরৎচন্দ্র আবার এক যুগ পরে লেখনী ধারণ করতে বাধ্য হলেন। সঙ্গে সঙ্গে সার্থক হয়ে উঠল তাঁর পুনরাগমন, তাঁর রচনাগুলি কাজ করলে মন্ত্রশক্তির মত, দিকে দিকে শোনা গেল বহু কণ্ঠের অভিনন্দন। তখন নতুন প্রেরণা লাভ ক’রে মাছি মারা কেরাণী আবার এসে বসলেন রূপেস্রষ্টা শিল্পীর আসনে। বাংলা সাহিত্য বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের পরে আবার লাভ করলে একজন প্রথম শ্রেণীর ঔপন্যাসিককে। প্রমথ চৌধুরী ও শরৎচন্দ্রের মন ফিরেছে দৈব ঘটনার জন্যে। তা না হ’লে কত মহান দান থেকে বঞ্চিত হ’ত বাংলা সাহিত্য।
“কল্লোলে”র আর এক আড্ডাধারী হচ্ছেন শ্রীপবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়। সাহিত্যক্ষেত্রে বিচরণ করছেন বহুকাল, “কল্লোল” সম্পাদক ছাড়া দলের আর সকলের চেয়ে বয়সেও বড়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পত্রিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে এবং নানা সাহিত্য-বৈঠকে আনাগোনা ক’রে তিনি বাংলা দেশের অধিকাংশ প্রখ্যাত সাহিত্যিকের সঙ্গে স্থাপন করেছেন বন্ধুত্বের সম্পর্ক। তাঁর রচনাশক্তিও আছে, কিন্তু
২৭২