বাজারের মহারাজা শ্রীশচন্দ্র নন্দীও গ্রন্থকার। সুসঙ্গের কুমুদচন্দ্রও ছিলেন সাহিত্যিক।
লালগোলার কুমার ধীরেন্দ্রনারায়ণ রায় যখন “রাজা” উপাধি লাভ করেননি, তখন থেকেই একান্তভাবে সাহিত্যসেবা ক’রে আসছেন। এই সাহিত্যানুরাগের উৎস কোথায় তা অনুমান করা কঠিন নয়। তাঁর পিতামহ দানবীর মহারাজা রাও যোগীন্দ্রনারায়ণ রায় অবাঙালী হয়েও বাংলাদেশে এসে মনেপ্রাণে খাঁটি বাঙালী হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি যে বাংলা সাহিত্যের কত বড় বন্ধু ছিলেন, সে কথা এখানে নতুন ক’রে বলবার দরকার নেই। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে তাঁর স্মরণীয় অবদান আছে। অসংখ্য সাহিত্যিক অলঙ্কৃত করতেন তাঁর আসর। এমন কি সাহিত্যগুরু বঙ্কিমচন্দ্র পর্যন্ত কিছুদিনের জন্যে তাঁর আতিথ্য স্বীকার ক’রে রাজবাড়ীতে বসে রচনা করেছিলেন “আনন্দমঠে”র কিয়দংশ। এই পরিবেশের মধ্যে সুকুমার বয়স থেকে মানুষ হয়ে ধীরেন্দ্রনারায়ণেরও চিত্তে উপ্ত হয়েছিল সাহিত্যের বীজ।
তারপর তিনি দীর্ঘকালব্যাপী ছাত্রজীবন যাপন করেন আচার্য রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর অধীনে এবং তাঁর কাছেই ধীরেন্দ্রনারায়ণের সাহিত্যশিক্ষা আরম্ভ হয়। এমন অসাধারণ সাহিত্যবীরকে উপদেশকরূপে লাভ ক’রেই তিনি বঙ্গবাণীর পরম ভক্ত না হয়ে পারেননি। রামেন্দ্রসুন্দর ও রবীন্দ্রনাথ ছিলেন পরস্পরের অনুরাগী এবং দুজনেই আনাগোনা করতেন দুজনের আলয়ে। সেই সময়ে প্রায়ই উপস্থিত থাকতেন কিশোর ধীরেন্দ্রনারায়ণ এবং দুই সাহিত্যশিল্পীর কলালাপের ফাঁকে ফাঁকে আবৃত্তি করতেন রবীন্দ্রনাথের কবিতা। তাঁর তরুণ কণ্ঠে স্বরচিত কবিতার আবৃত্তি শুনে রবীন্দ্রনাথ আনন্দপ্রকাশ করতেন।
সুতরাং বোঝা যায়, সাময়িক খেয়াল চরিতার্থ করবার জন্যে তিনি হঠাৎ সাহিত্যিক হয়ে ওঠেননি। সাহিত্য তাঁর আবাল্য সাধনার বস্তু। দীর্ঘকাল ধ’রে তিনি লেখনী চালনা ক’’রে আসছেন। গল্প লিখেছেন, উপন্যাস লিখেছেন, কবিতা ও সঙ্গীত রচনা করেছেন। একদিন বাড়ীতে ফিরে এসে দেখি, আমার লেখবার টেবিলের উপরে পড়ে
২৭৬