পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজারাও ধীরেন্দ্রনারায়ণ

রয়েছে একটি হস্তলিখিত কবিতা। পাঠ করে বুঝলুম, ধীরেন্দ্রনারায়ণ এসেছিলেন, কিন্তু আমার দেখা না পেয়ে সেইখানেই ব’সে কবিতাটি রচনা ক’রে রেখে গিয়েছেন। কিছুকাল আগে তিনি “নীল সাড়ী” নামে একখানি স্বরচিত নাটকও পাঠ ক’রে শুনিয়ে গিয়েছেন। নাটকখানি আমার ভালো লেগেছিল। তাঁর দুইখানি উপন্যাসের নাট্যরূপ রঙ্গমঞ্চের উপরে প্রদর্শিত হয়েছে। কিন্তু এই মৌলিক নাটকখানি এখনো পাদপ্রদীপের সামনে স্থাপিত হয়নি।

 নাট্যজগতের দিকেও তাঁর আকর্ষণ খুব প্রবল। শুনেছি লালগোলায় তিনি বড় বড় ভূমিকায় সৌখীন অভিনেতারূপে দেখা দিয়েছেন। তাঁর কোন অভিনয় দেখবার সুযোগ আমার হয়নি বটে, কিন্তু কলকাতার বিভিন্ন রঙ্গালয়ের প্রেক্ষাগৃহে নাট্যরসিক দর্শকরূপে তাঁকে উপস্থিত থাকতে দেখেছি।

 ষ্টার থিয়েটারের প্রেক্ষাগৃহেই তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। ঊনত্রিশ-ত্রিশ বৎসর আগেকার কথা। লক্ষ্য করলুম, একটি সুন্দর্শন, দীর্ঘদেহ যবক দূর থেকে ঘন ঘন আমার দিকে তাকিয়ে দেখছেন। তারপর তিনি নিজেই আমার কাছে এসে আলাপ করলেন। পরিচয় পেয়ে জানলুম, তিনি হচ্ছেন লালগোলার কুমার ধীরেন্দ্রনারায়ণ। বললেন, “আমি আপনার পরম ভক্ত।” কি গুণে আমি তাঁকে আকৃষ্ট করেছিলুম জানি না, কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয়ে উঠল অত্যন্ত নিবিড়। লালগোলা থেকে কলকাতায় এলেই তিনি আমার বাড়ীতে ছুটে আসতেন। দীর্ঘকাল ধ’রে গল্পসল্প চলত—আজও চলে। আমি আজকাল বাড়ীর বাইরে পারতপক্ষে পা বাড়াই না, কিন্তু তিনি আমার বাড়ীতে এসে উপস্থিত হন যখন তখন এবং অভিযোগ করেন, কেন আমি তাঁর সঙ্গে গিয়ে দেখা করি না?

 একদিন সন্ধ্যায় আমাকে নিয়ে তিনি বেড়াতে বেরিয়ে গঙ্গার ধারে গিয়ে পড়লেন। তারপর দুইজনে গাড়ী থেকে নেমে গিয়ে বসলুম গড়ের মাঠের এক বেঞ্চের উপরে। আমি টানতে লাগলুম সিগারেট, তাঁর জন্যে অনুচর নিয়ে এল আলবোলা।

 ধীরেন্দ্রনারায়ণ বললেন, “উঁহ,, খালি ধোঁয়া খেয়ে তো পেট ভরে

২৭৭