কোন সন্দেহই থাকতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশে পুরুষের নাচ শিক্ষিতদের আসরে জমবে কি?
বললুম, “হরেন, এঁকে একেবারে জনসাধারণের সামনে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করানো সমীচীন হবে না। তোমরা আগে শিল্পাচার্য অবনীন্দ্রনাথের কাছে যাও। আমার বিশ্বাস, তিনি কোন একটা ব্যবস্থা ক’রে দিতে পারবেন।”
আমার বিশ্বাস ভ্রান্ত হ’ল না। অবনীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করার পর স্থির হল, তিনি প্রাচ্য-কলা-সংসদের প্রকাণ্ড হলঘরটি উদয়শঙ্করের নাচের জন্যে ছেড়ে দেবেন এবং নাচের দিনে আমন্ত্রণ করা হবে কলকাতার বিশিষ্ট নাগরিকদের।
ইতিমধ্যে য়ুরোপের বিভিন্ন পত্রিকায় উদয়শঙ্করের নাচের সমালোচনা পাঠ করে তাঁর সাফল্য সম্বন্ধে আমার মনে আর কোন সন্দেহ রইল না। প্যারিসের La Grifie বলেছেঃ “ছন্দ হচ্ছে এই সুন্দর নর্তকের অঙ্গবিশেষের মত, ছন্দহিল্লোলে তিনি পরিপূর্ণ; তাঁর পিত্তলবর্ণ দেহের সমস্ত মাংসপেশী তাঁরই বশীভূত।” বার্লিনের Tempo বলেছেঃ “এক উপভোগ্য অলৌকিক ব্যাপার! দেবতারা ধরায় অবতীর্ণ হয়েছেন এবং যেসব গতির দ্বারা নিজেদের চিত্তকে ব্যক্ত করেছেন, তার সঙ্গে কেবল ফুল ও দেবযানীর তুলনা চলতে পারে।” ভিয়েনার Neuess Wiener Tageblatt বলেছেঃ “উদয়শঙ্করের মূর্তি হচ্ছে যৌবনের মূর্তি— পাতলা, দেহ হিসাবে নিখুঁত এবং সেই সঙ্গে ভালো ইস্পাতের মত নমনশীল। তাঁর সকল গতিই নমনীয় লীলায় সুন্দর। তাঁর নৃত্যচিত্রগুলি গভীর রেখায় চমৎকার।”
উদয়শঙ্কর কোন সম্প্রদায় নিয়ে কলকাতায় আসেন নি। এমন কি তাঁর প্রধান নৃত্যসঙ্গিনী সিমকীও তখন ছিলেন য়ুরোপে। সুতরাং একক নৃত্য ছাড়া আর কিছু দেখাবার উপায় তাঁর ছিল না। তার উপরেও ছিল আর এক মস্ত অসুবিধা। নাচের সঙ্গে চাই বাজনার সঙ্গত। ঐকতানের ব্যবস্থা হবে কেমন ক’রে?
হাতে সময় নেই, ঐকতানের ব্যবস্থা হ’ল না। কোনরকমে সে অভাব পূরণ করবার জন্যে গ্রেপ্তার ক’রে আনা হ’ল স্বর্গীয় কুমার গোপিকারমণ রায়ের বিদ্যাবতী, কলাবতী ও রূপবতী কন্যা (তিনিও
২৮৪