আমাকে উপদেশ দিয়েছিলেন, “হেমেন্দ্র, প্রথমে যা মনে আসবে, তাই লিখো। তবেই লেখা হবে স্বাভাবিক।”
বিখ্যাত লেখক ও নানা সংবাদপত্রের সম্পাদক পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলতেন, “একটা বাক্য (sentence) খানিকটা লিখে মনের মনের মত হ’ল না ব’লে কেটে দেওয়া ঠিক নয়। সেই বাক্যটাই চটপট সম্পূর্ণ ক’রে ফেলা উচিত, কারণ সাংবাদিকের কাজ শেষ করতে হয় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।”
কিন্তু এ রীতি সাংবাদিকের উপযোগী হ’লেও সাহিত্যিকের নয়। তবে অবনীন্দ্রনাথের কাছে যে পদ্ধতি সহজ এবং যা অবলম্বন ক’রে তিনি রাশি রাশি সোনা ফলাতে পারেন, অধিকাংশ সাহিত্যিকের পক্ষে তা অকেজো হয়ে পড়বার সম্ভাবনা। এখানেও একটা মধ্য-পন্থা আছে। মনের ভিতরে প্রথমেই যে বাক্য আসবে, মনে মনেই তা অদলবদল ক’রে নিয়ে তারপর কাগজকলমের সাহায্য গ্রহণ করলে রচনায় বিশেষ কাটাকুটির দরকার হয় না।
অবনীন্দ্রনাথের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের কথা বলি। সে বোধ করি তেতাল্লিশ কি চুয়াল্লিশ বৎসর আগেকার কথা।
“ভারতী” পত্রিকার জন্যে রচনা করেছিলুম প্রাচীন ভারতীয় চিত্রকলা সম্বন্ধে একটি প্রবন্ধ। সম্পাদিকা স্বর্ণকুমারী দেবী বললেন, “এ লেখার সঙ্গে অজন্তার দুই একখানা ছবি দেওয়া দরকার। তুমি অবনীন্দ্রনাথের কাছে যাও, আমার নাম করলে সেখান থেকেই ছবি পাবে।”
সরাসরি অবনীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করবার ভরসা আমার হ’ল না। কিন্তু ঠাকুরবাড়ীর অন্যতম বিখ্যাত লেখক সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন আমার পরিচিত, তিনি আমাকে বিশেষ প্রীতির চক্ষে দেখতেন, মাঝে মাঝে আমার বাড়ীতেও পদার্পণ করতেন। আমি তাঁকেই গিয়ে ধরলুম, অবনীন্দ্রনাথের কাছে আমাকে নিয়ে যাবার জন্যে।
সুধীন্দ্রনাথের পিছনে পিছনে অবনীন্দ্রনাথদের বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করলুম। দ্বারবানদের দ্বারা রক্ষিত দরজা পার হয়েই এক-
১৬