স্মরণীয় নৃত্যনাট্য রচনা ক’রে আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন, জীবনের গুরুতর সমস্যাগুলিও নাচের ছন্দের ভিতর দিয়ে ফুটিয়ে তোলা যায় এবং প্রকাশ করা যায় একটা সমগ্র জাতির আশা ও আকাঙ্ক্ষা। সে সব আসরে হাল্কা মন নিয়ে হাজির হ’লে দর্শকদেরও হ’তে হবে উপভোগ থেকে বঞ্চিত। তাঁর এই শ্রেণীর কোন কোন নাচে দেখা যায় রুসীয় ‘ব্যালে’র অল্পবিস্তর প্রভাব। কিন্তু এটা নিন্দনীয় নয়। আর্টের ক্ষেত্রে এমন লেনদেনের প্রথা চিরকালই প্রচলিত আছে। বাংলা সাহিত্যের সর্বত্রই দেখা যায় য়ুরোপীয় প্রভাব। কিন্তু সেজন্যে বাংলার সাহিত্য হয়ে ওঠেনি য়ুরোপের সাহিত্য। পাশ্চাত্য চিত্রকলার উপরে পড়েছে জাপানী, মিসরীয়—এমন কি অসভ্য কাফ্রীদেরও শিল্পের প্রভাব। তবু পাশ্চাত্য আর্ট হারিয়ে ফেলেনি নিজের জাত।
উদয়শঙ্করের জনপ্রিয়তার মূলে আছে আরো কোন কোন কারণ। তিনি দেশ-বিদেশের নাচের সঙ্গে সুপরিচিত হবার জন্যে ব্যয় করেছেন বহু সময়, বহু পরিশ্রম। নিজে ‘ক্লাসিকাল’ নৃত্য যে জানেন, সে কথা বলাই বাহুল্য। দক্ষিণ ভারতীয় নৃত্যাচার্য শঙ্করম নম্বুদিরির কাছে গিয়ে মুদ্রাপ্রধান “কথাকলি” নাচও শিক্ষা করেছেন। য়ুরোপে বাস ক’রে ও রুস-নৃত্যসম্প্রদায়ে যোগ দিয়ে তিনি যে য়ুরোপীয় নাচের বিশেষত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছেন, এটকুও অনুমান করা যায় অনায়াসে। কিন্তু কোন বিশেষ পদ্ধতিই তাঁর সক্রিয় মস্তিষ্ক ও স্বকীয় পরিকল্পনাকে আচ্ছন্ন ক’রে ফেলতে পারেনি। যখনই দরকার মনে করেছেন তখনই তিনি যেখান থেকে খুসি তিল তিল সৌন্দর্য আহরণ ক’রে গ’ড়ে তুলতে চেয়েছেন আপন পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্পূর্ণ নূতন এক তিলোত্তমাকে।
নৃত্যপ্রধান চলচ্চিত্র “কল্পনা” দেখিয়ে তিনি তাঁর মুন্সীয়ানার আর এক পরিচয় দিয়েছেন। এই ছবিতে তিনি দেখাতে চেয়েছেন শিল্পীর উদ্ভট কল্পনাবিলাস, ইংরেজীতে যাকে বলে “ফ্যাণ্টাসি”। ও বস্তুটির প্রকৃত অর্থ এদেশের অনেকেই জানে না, তাই ছবিখানির আখ্যানভাগের আসল মর্ম হয়তো অনেকের কাছেই স্পষ্ট হয়ে
২৯০