ছন্দের ভিতর থেকেই আত্মপ্রকাশ করবে না ভবিষ্যতের ভারতীয় প্রধান নৃত্য?
কিন্তু দক্ষিণ ভারতের একাধিক নৃত্যবাচস্পতি বাঙালী উদয়শঙ্করের প্রতিভাকে স্বীকার করতে প্রস্তুত নন। শিল্প-সমালোচক শ্রীভেঙ্কটাচলমের মতে, “কথাকলি ও ভারত নাট্যমের শিল্পীদের কাছে উদয়শঙ্কর হচ্ছেন শিক্ষার্থী ও সৌখীন (নভিস অ্যাণ্ড এমেচার) মাত্র।”
যিনি বাল্যকাল থেকে একান্তভাবে নৃত্যসাধনা ক’রে আজ অর্থশতাব্দী পার হয়ে এসেছেন এবং যিনি ভারতের এবং য়ুরোপ—আমেরিকার দেশে দেশে লাভ করেছেন অতুলনীয় অভিনন্দন, তিনিই নাকি “শিক্ষার্থী ও সৌখীন”! এর চেয়ে অতিবাদ শোনা যায় না।
কিন্তু কেন? উদয়শঙ্করের আর্ট জটিল, দুর্বোধ ও কষ্টসাধ্য নয় ব’লে? আমরা এতদিন জানতুম, যে আর্ট নিজের কৃত্রিমতা ও জটিলতা গোপন ক’রে সহজ, স্বাভাবিক ও সুবোধ্য হয়ে উঠতে পারে, তাকেই যথার্থভাবে বলা চলে উচ্চশ্রেণীর। প্যাঁচালো কায়দা দেখিয়ে গলদ্ঘর্ম হওয়াই প্রকৃত শিল্পীর লক্ষণ নয়। ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নৃত্যগুরুর কাছে উদয়শঙ্কর কথাকলি নৃত্য শিক্ষা করেছেন, কিন্তু কথাকলির অতিরিক্ত মুদ্রাপ্রাধান্যকে আমল দিয়ে নিজের আর্টের বা নাচের সরলতা ক্ষুণ্ণ করতে চান নি। বর্তমান যুগে যিনি মধ্য যুগের ফতোয়া প্রতি পদে মাথা পেতে মেনে নেবেন, তাঁর মনীষা ও সার্থকতা আমি স্বীকার করতে নারাজ।
হরেন ঘোষ ও উদয়শঙ্করের আমন্ত্রণে একটি ঘরোয়া বৈঠকে অতুলনীয়া নর্তকী বালাসরস্বতীর নাচ দেখবার সুযোগ পেয়েছিলুম। সেই জটিল নাচে শ্রীমতীর অপূর্ব কৃতিত্ব দেখে বিস্মিত হলুম। কেবল কি তাই? ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধ’রে সেই বহুশ্রমসাধ্য কঠিন ও প্যাঁচালো নাচে তিনি একাই যে শক্তি জাহির করলেন, তা অভাবিত বললেও অত্যুক্তি হবে না।
উদয়শঙ্কর আমার পাশেই বসেছিলেন। তিনি নিজের স্বভাবসিদ্ধ বিনয় প্রকাশ ক’রে বললেন, “দাদা, চেষ্টা করলেও আমি একা এতক্ষণ ধ’রে এমন কঠিন নাচ নাচতে পারতুম না।”
২৯২