মেয়েদের নাচ শেখাতে শুরু করেছি, এমন সময়ে চন্দ্রাবতী বললেন, “হেমেন্দ্রবাবু সতী কি নাচতে পারেন?”
—“কেন পারবেন না?”
-“তাহ’লে আমিও নাচতে চাই।”
“বেশ তো, সে ব্যবস্থাও হবে।”
কিন্তু সে যাত্রা চন্দ্রাবতীকেও নাচতে হয় নি, আমাকেও নৃত্য পরিকল্পনা সুরু ক’রেই ক্ষান্ত হ’তে হয়েছিল। কারণ বলি।
তার আগে চন্দ্রাবতী কোন দিন নাচেন নি। কিন্তু সেজন্যে ছিল না আমার কিছুমাত্র দুশ্চিন্তা। কারণ একাধিক নৃত্যে অনভিজ্ঞা তরুণীকে অল্পদিনের ভিতরেই আমি নাচে পোক্ত (অন্ততঃ কাজ চালাবার উপযোগী) ক’রে তুলতে পেরেছি। কিন্তু গোল বাধল অন্য কারণে।
আমার পরিল্পনা অনুসারে চন্দ্রাবতী নাচ অভ্যাস করলেন দুই কি তিন দিন। তার পরেই বেঁকে ব’সে বললেন, “ও নাচ-টাচ আমার দ্বারা হবে না।”
আমি বললুম, “ব্যাপার কি?”
চন্দ্রাবতী বললেন, “নাচলে যে গায়ে এত ব্যথা হয়, আমি তা জানতুম না। উঃ, আমার সর্বাঙ্গ ফোড়ার মত টাটিয়ে উঠেছে। বাবা, আমার আর নাচ শিখে কাজ নেই।”।
চন্দ্রাবতী পৃষ্ঠভঙ্গ দিলেন, আমাকেও দিতে হ’ল অন্য কারণে।
প্রাচীন ভাস্কর্য থেকে আদর্শ সংগ্রহ ক’রে আমি সতীর কবরীর জন্যে করেছিলুম একটি বিশেষ পরিকল্পনা। কিন্তু স্টুডিয়োর বেশকার সে রকম কেশবিন্যাসে অভ্যস্ত ছিল না, সে চেষ্টা ক’রেও শেষটা নিজের অক্ষমতা জানাতে বাধ্য হ’ল। অগত্যা আমাকেই উপস্থিত থাকতে হ’ল সাজঘরে এবং আমার ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে বেশকার অবশেষে বহুক্ষণের পর সেই বিশেষ ধরণের কবরীটি রচনা করতে পারলে। সে ধাঁজে খোঁপা বেঁধে চন্দ্রাবতীকে দেখাচ্ছিল চমৎকার।
ছবি তোলার সময়ে ‘সেটে’ গিয়ে দেখি, সতীর মাথায় ঘোমটা, আমাদের এত যত্নশ্রমে বাঁধা কবরী অদৃশ্য!
২৯৫