খানি ঘর, সেখানে দেওয়ালের গায়ে হাতে আঁকা ছবি। একখানি বড় ছবির কথা মনে আছে, তাতে ছিল একটি কলাগাছের ঝাড়। দেশীয় পদ্ধতিতে আঁকা নয়। চিত্রকার অবনীন্দ্রনাথ স্বয়ং।
সামনেই প্রশস্ত সোপানশ্রেণী—সেখানেও রয়েছে বিলাতী পদ্ধতিতে আঁকা প্রকাণ্ড একখানি তৈলচিত্র—“শূদ্রকের রাজসভা, চিত্রকর যামিনীপ্রকাশ গঙ্গোপাধ্যায়। ছবিখানি প্রভূত প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল।
দোতালার মস্তবড় বৈঠকখানা, সাজানো গুছানো, শিল্পসম্ভারে পরিপূর্ণ। ঘরের মাঝখানে ব’সে আছেন অবনীন্দ্রনাথ, পরনে পায়জামা ও পাঞ্জাবী। তাঁর সামনে উপবিষ্ট একটি ব্রাহ্মণ পণ্ডিত গোছের লোক। তাঁর সঙ্গে কথা কইতে কইতে অবনীন্দ্রনাথ একবার মুখ তুলে আমার দিকে তাকালেন, তারপর আবার পণ্ডিত গোছের লোকটির দিকে ফিরে বললেন, “লাইনগুলি একবার বলুন তো!”
তিনি বললেন, “বৈষ্ণব কাব্যের রাধা শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশে বলছেন—
'রন্ধনশালায় যাই
তুঁয়া বঁধু গুণ গাই,
ধুঁয়ার ছলনা করি কাঁদি।
অর্থাৎ শাশুড়ী-ননদী কোন সন্দেহ করতে পারবে না, ভাববে চোখে ধোঁয়া লেগেছে ব’লে আমি কাঁদছি!”
অবনীন্দ্রনাথ উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলে উঠলেন, “বাঃ, বেড়ে তো! ধুঁয়ার ছলনা করি কাঁদি’! এ লাইন নিয়ে খাসা একখানি ছবি আঁকা যায়।”
সুধীন্দ্রনাথ আমার পরিচয় দিলেন। আমিও আমার আগমনের উদ্দেশ্য বললুম।
তিনি বললেন, “বেশ, অজন্তার ছবির ব্যবস্থা আমি ক’রে দেব। আপনার ঠিকানা রেখে যান।”
সেইখানেই সেদিন প্রথম মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখেছিলুম, পরে যাঁর সঙ্গে আবদ্ধ হয়েছিলুম ঘনিষ্ঠতম বন্ধুত্ববন্ধনে।
দিন দুই পরেই একটি সাহেবের মত ফরসা যুবক আমার বাড়ীতে
১৭