অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিজেদের অত্যন্ত অসহায় ব’লে মনে করেন এবং অনেকেই হয়তো অভিনয়ই করতে পারবেন না।
আমার বিশ্বাস, চন্দ্রাবতী এই শ্রেণীর অভিনেত্রী নন, মঞ্চে নামলেও দিতে পারবেন নিজের গুণের পরিচয়। এবং এই ধারণা পোষণ করতেন অধুনালুপ্ত “নাট্যভারতী”র সুযোগ্য কর্ণধার, বন্ধুবর শ্রীশিশিরকুমার মল্লিকও। শিশিরবাবু একদিন আমাকে একখানি নাটক লেখবার জন্যে অনুরোধ ক’রে বললেন, প্রধান ভূমিকায় তিনি হয়তো চন্দ্রাবতীকে নামাতে পারবেন। শুনে আমি উৎসাহিত হয়ে একখানি গীতিবহুল নাটক রচনা করেছিলুম, নাম তার “চোখের জল।” কিন্তু আমার চিত্রে রূপায়িত উপন্যাসের নায়িকার ভূমিকার মত আমার নাটকের নায়িকার ভূমিকাতেও মঞ্চের উপরে তাঁকে দেখবার সুযোগ আর হ’ল না। “নাট্যভারতী” ভালোভাবেই চলছিল। কিন্তু বাড়ীর মালিক রঙ্গালয়টিকে চিত্রগৃহে পরিণত করবেন ব’লে চলতি “নাট্যভারতী”র অস্তিত্ব হ’ল বিলুপ্ত, সেখানে আর আমার রচিত পালা খোলাও সম্ভব হ’ল না। সেই অনভিনীত নাটকের পাণ্ডুলিপি শিশিরবাবুর কাছেই গচ্ছিত আছে। আমার হয়েছে পণ্ডশ্রম।
ব্যক্তিগত জীবনে চন্দ্রাবতী আমার কন্যার মত। আমার বাড়ীতে এসেছেন বহুবার। তাঁর সঙ্গে বাক্যালাপ ক’রে আনন্দ পেয়েছি, উপভোগ্য তাঁর আচরণ। আগে পূর্ণিমার চাঁদনি রাতে মাঝে মাঝে তিনি আমার কাছে আসতেন, গঙ্গাজলে জ্যোৎস্নার খেলা দেখবার জন্যে। তাঁকে নিয়ে ত্রিতলের ছাদে গিয়ে বসতুম, তিনি খুসি কণ্ঠে বলতেন, “কি চমৎকার জায়গায় আপনার বাড়ী!”
আমি বলতুম, “চন্দ্রা, গান শোনাও।”
চন্দ্রাবতী গাইতেন—
“সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে
ফুলডোরে বাঁধা ঝুলনা।”
তটিনীর কলতানের সঙ্গে চন্দ্রাবতীর কলকণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের কাব্যবাণী শুনতে শুনতে তাকিয়ে থাকতুম গঙ্গার বুকে উচ্ছলিত চন্দ্রাবলীর দিকে।
২৯৯