এখানে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, যতীন্দ্রমোহন বাগচী, করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়, কালিদাস রায়, কুমুদরঞ্জন মল্লিক ও মোহিতলাল মজুমদার প্রভৃতি রবীন্দ্রনাথের পরবর্তী কবিরা সমুদিত ও সুপরিচিত হয়েছেন। আরো দুই-একজন তখন উদীয়মান অবস্থায়। রবীন্দ্রনাথের লেখনী তখনও অশ্রান্ত। আমাদের কাব্যজগতে সেটা ছিল সুভিক্ষের যুগে। কবিতার কোন অভাবই কেউ অনুভব করে নি।
কিন্তু যুগধর্ম প্রকাশ করতে পারেন, দেশ যে এমন কোন নূতন কবিকে চায়, নজরুলের আত্মপ্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সেই সত্য উপলব্ধি করতে পারলে সকলেই।
এদেশে এমনিই তো হয়ে আসছে বরাবর। য়ুগে যুগে আমরা পুরাতন ও পরিচিতদের নিয়েই মেতে থাকতে চেয়েছি, অর্বাচীনদের উপরে কোন আস্থা না রেখেই। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাঙালী গদ্যলেখকরা যে উৎকট ভাষা ব্যবহার করতেন, তা ছিল পরোমাত্রায় সংস্কৃতের গোলাম। আমরা তারই মধ্যে পেতুম উপভোগের খোরাক, সৌন্দর্যের সন্ধান। হঠাৎ টেকচাঁদ ঠাকুর ও হুতোম আবির্ভূত হয়ে যখন আমাদের ঘরের পানে তাকাতে বললেন, তখন আমরা একটু অবাক হয়েছিলুম বটে, কিন্তু তাঁদের ক’রে রেখেছিলুম কোণঠাসা। সাহিত্যের দরবারে কথ্য ভাষাকে কায়েমী করবার জন্যে পরে দরকার হয়েছিল প্রমথ চৌধুরীর শক্তি ও রবীন্দ্রনাথের প্রতিভা। যখন বঙ্কিমচন্দ্র “দুর্গেশনন্দিনী” ও মাইকেল মধূসুদন “মেঘনাদবধ” নিয়ে আসরে প্রবেশ করেন, তখনও কেউ তাঁদের প্রত্যাশা করে নি।
উপরোক্ত যুগান্তকারী লেখকগণের সঙ্গে নজরুলের তুলনা করা চলে না বটে, কিন্তু বহু কবিদের দ্বারা অধ্যুষিত বাংলা কাব্যসাহিত্যের ক্ষেত্রে তিনি যে এনেছিলেন একটি নূতন সুরু, সে কথা কিছুতেই অস্বীকার করা চলে না। বিংশ শতাব্দীর তরুণদের মধ্যে তিনিই হচ্ছেন প্রথম কবি, রবীন্দ্রনাথের যশোমণ্ডলের মধ্যে থেকেও যিনি খুঁজে পেয়েছেন স্বকীয় রচনাভঙ্গি ও দৃষ্টিভঙ্গি।
প্রথম মহাযুদ্ধে নজরুল 'ইউনিফর্ম' প’রে সৈনিকের ব্রত গ্রহণ
৩০২