করেছিলেন।পরে ইউনিফর্ম' খুলে ফেললেও কাব্যজগতেও প্রবেশ করেছিলেন সৈনিকের ব্রত নিয়েই। দুর্গত দেশবাসীদের শাক্তের গান শুনিয়ে তিনি দুদিনেই জাগ্রত ক’রে তুললেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে নিজেও গ্রহণ করলেন একটি নাতিক্ষুদ্র অংশ। রাজরোষ তাঁকে ক্ষমা করলে না, তাঁর স্থাননির্দেশ করলে বন্দীশালায়। কিন্তু তবু দমিত হ’ল না তাঁর বিদ্রোহ।
কিন্তু তাঁর এ বিদ্রোহ কেবল দেশের রক্তশোষক শাসক জাতির বিরুদ্ধে নয়, এ বিদ্রোহ হচ্ছে সাম্প্রদায়িক বিরোধের বিরুদ্ধে, ছতমার্গগামী সমাজপতিদের বিরুদ্ধে, বৈড়ালৱতী ভণ্ডদলের বিরুদ্ধে—এককথায় সকল শ্রেণীর অনাচারী দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে।
নজরুল যখন সবে কবিতা লিখতে সুরু করেছেন, তখনই তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয়। নিত্য আমাদেরই বৈঠক ছিল তাঁর হাঁফ ছাড়বার জায়গা। সেই সময়েই তাঁর গুটিকয় কবিতা প’ড়ে তাঁকে ভালো কবি ব’লে চিনতে পেরেছিলুম। তারপরই তিনি আমাকে রীতিমত বিস্মিত ক’রে তুললেন।
সাপ্তাহিক “বিজলী” পত্রিকা আমার কাছে আসত নিয়মিতরূপে, তার জন্যে আমি রচনা করেছি উপন্যাস, কবিতা ও গান প্রভৃতি। হঠাৎ এক সংখ্যার “বিজলী”তে দেখলুম, নজরুলের রচিত দীর্ঘ এক কবিতা, নাম “বিদ্রোহী”। দীর্ঘ কবিতা আমাকে সহজে আকৃষ্ট করে না। কিন্তু কৌতূহলী হয়ে সে কবিতাটি পাঠ করলুম। দীর্ঘতার জন্যে কোনখানেই তা একঘেয়ে লাগল না, সাগ্রহে প’ড়ে ফেললুম সমগ্র কবিতাটি। একেবারে অভিভূত হয়ে গেলুম। তার মধ্যে পাওয়া গেল অভিনব স্টাইল, ভাব, ছন্দ, সুর ও বর্ণনাভঙ্গি। এক সবল পুরুষের দৃপ্ত কণ্ঠস্বর। বঝলুম, নজরুল আর উদীয়মান নন, সম্যকরূপে সমুদিত। দেশের লোকরাও তাই বুঝলে। সেই এক কবিতাই তাঁকে যশস্বী ক’রে তুললে সর্বত্র। সবাই বলতে লাগল তাঁকে “বিদ্রোহী কবি”।
কিন্তু নজরুল কেবল শক্তির দীপক নয়, শুনিয়েছেন অনেক সকুমার প্রেমের গানও। কখনো ধ্রুপদ ধরেন, কখনো ধরেন ঠুংরী।
৩০৩