আটত্রিশ
কুমার শচীন্দ্র দেব—বর্মণ
আমার ঘরোয়া বৈঠকের শোভাবর্ধন করেছেন বাংলাদেশের বহু কীর্তিমান গায়কই। তাঁদের মধ্যে প্রধান প্রধান ব্যক্তি হচ্ছেন স্বর্গীয় ওস্তাদ জমীরুদ্দীন খাঁ, শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র দে ও শ্রীদিলীপকুমার রায় প্রভৃতি। তাঁদের কথা নিয়ে আগেই বিশেষভাবে আলোচনা করেছি ভিন্ন গ্রন্থে বা ভিন্ন প্রবন্ধে। প্রথমোক্ত দুই শিল্পী আমার বাড়ীতে এসে যে কতবার সুরস্বর্গ সৃষ্টি করেছেন, তার আর সংখ্যা হয় না। একবার সবচেয়ে দীর্ঘ গানের মাইফেল চালিয়েছিলেন জমীরুদ্দীন খাঁ সাহেব। হারমোনিয়াম নিয়ে বসলেন এক দোলপূর্ণিমার দিন দুপুরে; তারপর রাত দুপুর ছাড়িয়েও চলল তাঁর গানের অবিরাম স্রোত। একাই বারো ঘণ্টারও বেশী গান গেয়েও তিনি শ্রান্ত হয়ে পড়েন নি। জমীরুদ্দীন ছিলেন বিস্ময়কর গায়ক এবং তাঁর গানের ভাণ্ডারও ছিল অফুরন্ত। কিন্তু বড়ই দুঃখের বিষয় যে, অত্যন্ত মদ্যপানের ফলে প্রৌঢ় বয়সেই ফুরিয়ে যায় তাঁর পৃথিবীর মেয়াদ। তাঁর পত্র বালিও একসঙ্গে পিতার দোষ ও গুণ দুয়েরই অধিকারী হয়েছিলেন। গাইতেন চমৎকার গান এবং করতেন অতিরিক্ত সুরাপান। তাঁকেও কাঁচা বয়সেই করতে হয়েছিল মহাপ্রস্থান। গায়ক সমাজে মৈজদ্দীন খাঁ ছিলেন ঐন্দ্রজালিকের মত। এমন আশ্চর্য ছিল তাঁর অশিক্ষিতপটুত্ব, ভারতের যে কোন প্রথম শ্রেণীর ওস্তাদের সঙ্গে তিনি পাল্লা দিতে পারতেন। তিনি ছিলেন শ্রুতিধর। একবার মাত্র শ্রবণ করলেই বড় বড় রাগ-রাগিণীকে নিজের ক’রে নিতে পারতেন। কিন্তু সুরার স্রোতে সাঁতার দিয়ে তিনিও অকালে ভেসে গিয়েছিলেন পরলোকে। নট ও গায়ক— বিশেষ ক’রে এই দুই শ্রেণীর শিল্পীর সামনেই সুরা খুলে দেয় সর্বনাশের পথ। শিল্পীর আর্টকেও করে অবনত এবং শিল্পীর
৩১৪