পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৩৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
এখন যাঁদের দেখছি

শিল্পের মধ্য দিয়েই, শিল্পকে ত্যাগ ক’রে নয়। এদেশেই বিশেষ ক’রে একথা খাটে। সঙ্গীতের মাধ্যমেই আত্মপ্রকাশ ক’রে গিয়েছেন সাধক রামপ্রসাদ। কীর্তন হচ্ছে বাংলাদেশের নিজস্ব সঙ্গীত–পদ্ধতি। চৈতন্যদেব ঐহিক সব-কিছুই ছাড়তে পেরেছিলেন, কিন্তু ছাড়তে পারেন নি কীর্তনকে। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সাধনমার্গেও সঙ্গীত করেছিল বিশেষ সহযোগিতা। ভারতবর্ষ সঙ্গীতের ভিতর দিয়েই লাভ করে পরমার্থ।

 ভীষ্মদেব আবার অরবিন্দ-আশ্রম ছেড়ে গৃহাশ্রমে প্রত্যাগত হয়েছেন। কিন্তু তিনি যে সঙ্গীতজগতে পুনরাগমন করেছেন, এমন সংবাদ পাইনি।

 আধুনিক গায়কদের মধ্যে কুমার শ্রীশচীন্দ্র দেব–বর্মণের পসার হয়েছে যথেষ্ট। তিনি আগে ছিলেন কৃষ্ণচন্দ্রের শিষ্য, তারপর তালিম নেন ভীষ্মদেবের কাছে। ত্রিপুরার রাজবংশে তাঁর জন্ম, কিন্তু আলস্য চর্চা না করে তিনি সঙ্গীতকেই করেছেন জীবনের সাধনা।

 আজকাল রেকর্ড, রেডিও ও সিনেমার প্রসাদে অরসিকদের জনতার মাঝখানে এরণ্ডরাও মহামহীরূহের অভিনন্দন আদায় ক’রে নিতে পারছে। যেখানে সম্মানিত হন না সুশিক্ষিত প্রাচীন সঙ্গীতকুশলীরা, সেখানে যশের মাল্য প’রে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কুড়োতে দেখি এই সব আনাড়ী অর্বাচীনদের। মাত্র একটি কারণেই তাঁরা পারানি না দিয়েও নদী পার হবার সুযোগ পান এবং সে কারণটি হচ্ছে, তাঁদের গলা তৈরি না হ’লেও শুনতে মধুর। আগেও এ শ্রেণীর গাইয়ের অভাব ছিল না। কিন্তু যেমন মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত, কচি ও কাঁচা মিষ্ট গলার জোরে তাঁরা বড় জোর বসবার জায়গা পেতেন আমুদে ছোকরাদের আড্ডাখানায়। বড় বড় সার্বজনীন আসরে কলকে পাবার জো ছিল না তাঁদের। কিন্তু এখন সে সব জায়গাতেও তাঁদের দেখা পাওয়া যায়।

 শচীন্দ্রদেব ঐ শ্রেণীর গায়ক নন। গান ও কণ্ঠস্বর নিয়ে প্রভূত অনুশীলন করেছেন বলেই সাধনমার্গে তিনি নিশ্চিত পদে অগ্রসর হ’তে পেরেছেন। বড় দরদী তাঁর কণ্ঠস্বর, একটু ভাঙা

৩১৬