আমার রচিত উপন্যাসকে যখন কালী ফিল্মস “তরুণী” নামক চিত্রে রূপায়িত করে, তখন তার কয়েকটি গানে সুর– সংযোজনার ভার নেন হিমাংশু দত্ত। সেই সময়ে কালী ফিল্মের স্টুডিয়োতেই হিমাংশু দত্তের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয়। তাঁর সুর দেবার শক্তি ও শিল্পীসুলভ সংলাপ আমাকে আকৃষ্ট করে। দুদিন পরেই বুঝতে পারলুম দেশী গান সম্বন্ধে সুপণ্ডিত হয়েও তিনি গোঁড়া ওস্তাদদের মত ছুতমার্গের ধার ধারতেন না, স্বীকার করতেন আধুনিক যুগধর্ম। দরকার হ’লে উচ্চশ্রেণীর কলাবিদের মত পাশ্চাত্য সঙ্গীতের কোন কোন বিশেষত্বকে একেবারে ঘরোয়া জিনিস ক’রে নিতে পারতেন। গুরুদাস চট্টোপাধ্যায়ের মত তিনিও য়ুরোপীয় সঙ্গীতে লব্ধপ্রবেশ ছিলেন কিনা বলতে পারি না, তবে বিলাতী সুরের সঙ্গে তিনি যে পরিচিত ছিলেন, এ সম্বন্ধে সন্দেহ নেই।
মাঝে মাঝে তিনি আমার বাড়ীতে এসেছেন এবং আমার অনুরোধে গানও গেয়েছেন কিন্তু মৃদুকণ্ঠে। আমার রচিত আর একখানি চিত্রনাট্যের (শ্রীরাধা) গানেও তিনি চমৎকার সুর দিয়েছিলেন। ইস্ট ইণ্ডিয়া ফিল্ম কোম্পানীর একজন স্থায়ী সুরকারের দরকার হয়, আমি কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁরই নাম বলি। তাঁরা উপযুক্ত পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা ক’রে তাঁকে নিয়ে যান।
কিছুদিন পরে হিমাংশু দত্ত এসে বললেন, “হেমেন্দ্রবাবু, আমি ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী ছেড়ে দিয়েছি।”
আমি জিজ্ঞাসা করলুম, “কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বনিবনাও হ’ল না বুঝি?”
তিনি বললেন, “না, তা নয়। বাংলা আর হিন্দী ছবির রাশি রাশি গানে খুব তাড়াতাড়ি সুর দেবার ভার পড়ত আমার উপরে। যেমন তেমন ভাবে তাড়াহুড়ো ক’রে সুর দিয়ে আমি আনন্দ পাই না।কাজেই আমার পোষালো না।”
খাঁটি শিল্পীর উক্তি—সচরাচর যা শোনা যায় না। আর্টের মস্ত শত্রু হচ্ছে, ব্যস্ততা। কিন্তু এদেশের সাধারণ রঙ্গালয়ে এবং চলচ্চিত্রশালায় ও-যুক্তি খাটে না। মার্কামারা পেশাদার না হ’লে কোন শিল্পীই সেখানে তিষ্ঠোতে পারে না। দরকার হ’লে সেখানে
৩২১