দর্দুর বা ভেকের অচ্ছেদ্য সম্পর্ক। বলেন, “এখানে ব্যাং কই, ব্যাং না ডাকলে কি বর্ষা জমে?”
তখনই হুকুম হয়, “যেখান থেকে পারো কতকগুলো ব্যাং ধ’রে নিয়ে এস।”
লোকজন ঝালি নিয়ে ছোটে। হেদুয়া না গোলদিঘির পুকুরপাড়ে নিরাপদে ও নির্ভাবনায় দল বেঁধে ব’সে যে সব দর্দুরনন্দন কাব্যে বর্ণিত মকধ্বনিতে পরিপূর্ণ করে তুলছিল চতুর্দিক, হানাদাররা হঠাৎ গিয়ে পড়ে তাদের উপরে, টপাটপ ক’রে ধ’রে পুরে ফেলে ঝুলির ভিতরে। তারপর ঝুলিভর্তি ব্যাং এনে ঠাকুরবাড়ীর বাগানে ছেড়ে দেয়। বাস্তুহারা হয়েও ভেকের দল ভড়কে যায় না, গ্যাঙর গ্যাঙর তানে সম্মিলিত কণ্ঠে চলতে থাকে তাদের গানের আলাপ। অবনীন্দ্রনাথের মনে বর্ষার ঠিক রূপটি ফোটে। কিন্তু অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে হয়তো বাড়ীর লোকের কাণ আর প্রাণ।
এ গল্পটি আমার কাছে বলেছিলেন অবনীন্দ্রনাথের জামাতা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়।
ঠাকুরবাড়ীর প্রত্যেকেরই একটি শিষ্ট আচরণ লক্ষ্য করেছি। সর্বপ্রথম যখন রবীন্দ্রনাথের কাছে গিয়েছি তখন তিনি ছিলেন প্রৌঢ়, আর আমি ছিলুম প্রায় বালক। কিন্তু তখনও এবং তারপরও অনেক দিন পর্যন্ত তিনি আমাকে “তুমি” বলে সম্বোধন করতে পারেন নি। গগনেন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথও আমাকে “বাবু” বলে সম্বোধন করতেন, এটা আমার মোটেই ভালো লাগত না। অবশেষে আমার অত্যন্ত আপত্তি দেখে অবনীন্দ্রনাথ আমাকে “বাবু” ও “আপনি” প্রভৃতি বলা ছেড়ে দেন। সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুরও আমার পিতার বয়সী হয়েও আমার সঙ্গে ব্যবহার করতেন সমবয়সী বন্ধুর মত, তবু কিন্তু তিনি আমাকে কোনদিনই “তুমি” বলে ডাকতে পারেন নি, আমি আপত্তি করলে খালি মুখ টিপে হাসতেন। এ শ্রেণীর শিষ্টাচার দুর্লভ।
“আনন্দবাজার পত্রিকা”র সম্পাদক স্বর্গীয় প্রফুল্ল সরকারকে অবনীন্দ্রনাথ একদিন অতিশয় অবাক ক’রে দিয়েছিলেন। ১৩৩১
২০