ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ। আমার ছেলের দিকে তাকিয়ে সুধোলেন, “তোমার সঙ্গে এটি কে?”
বললুম, “আমার ছেলে।”
অবনীন্দ্রনাথ তো হেসেই অস্থির। বললেন, “হেমেন্দ্র, তুমি আমার চোখে ধূলো দেবে ভেবেছ? ভাইকে ছেলে ব’লে চালিয়ে দিতে এসেছ?”
আমি যতই বলি, “না, এ সত্যিই আমার ছেলে” তিনি কিছুতেই সে-কথা মানতে রাজি হলেন না, কারণ আমার নাকি অত বড় ছেলে হ’তেই পারে না!
তিনি আমাকে তরুণ বয়স থেকে দেখেছেন। সেই তারুণ্যকেই তিনি মনে ক’রে রেখেছেন, আমি যে তখন প্রৌঢ় সেটা তাঁর চোখে ধরা পড়ে নি। কেবল প্রৌঢ় নই, আমি তখন ছয়টি সন্তানের পিতা।
অবনীন্দ্রনাথ কেবল তুলি ও কলমের ওস্তাদ নন, তাঁর অভিনয়নৈপুণ্যেও অসাধারণ। এটা নিশ্চয়ই সহজাত সংস্কারের ফল। তাঁর পিতামহ গিরীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা করেছিলেন “বাবুবিলাস” নাটক এবং নিজের বাড়ীতেই করেছিলেন তার অভিনয়ের আয়োজন। তাঁর পিতা গণেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন প্রথম যুগের বাংলা রঙ্গালয়ের একজন বিখ্যাত নাট্য-ধুরন্ধর। তিনি ছেলেবেলা থেকেই নিজের বাড়ীতে নাট্যোৎসব দেখে এসেছেন, সুতরাং পাদপ্রদীপের মায়ার দিকে আকৃষ্ট হয়েছেন স্বাভাবিকভাবেই। রবীন্দ্রনাথ সাধারণতঃ ভারিক্কে ভূমিকা নিয়েই রঙ্গমঞ্চে দেখা দিতেন, কিন্তু অবনীন্দ্রনাথ গ্রহণ করেছেন হাল্কা কৌতুকরসের ভূমিকা। তাঁর এই শ্রেণীর কয়েকটি অভিনয় আমি দেখেছি এবং মুগ্ধ হয়েছি। তিনি নিজে যেমন সহজ-সরল মানুষ, নাট্যমঞ্চের উপরেও দেখা দিয়েছেন ঠিক সেইভাবেই, একবারও মনে হয়নি কৃত্রিম অভিনয় দেখছি।
সাধারণ রঙ্গালয়েও মাঝে মাঝে তিনি অভিনয় দেখতে গিয়েছেন। “সীতা” নাট্যাভিনয়ে বাংলা নাট্যজগতে দৃশ্য-পরিকল্পনায় যুগান্তর এনেছিলেন তাঁরই এক শিষ্য শ্রীচারুচন্দ্র রায়। “মিশরকুমারী” নাট্যাভিনয়ে দৃশ্য-পরিকল্পক স্বর্গীয় অমরেন্দ্রনাথ সিংহ রায়ের কাজ দেখে খুসি হয়ে তিনি প্রশংসাপত্র দিয়েছিলেন ব’লে মনে হচ্ছে।
২২