কেন? সুরের তালের সঙ্গে নিজের ছন্দ মিলিয়ে তাকে স্বাধীনভাবে সৃষ্টি করতে হবে নূতন নূতন সৌন্দর্য।”
“ভারতী” পত্রিকার কার্যালয়ে বসত আমাদের একটি সাহিত্যিক বৈঠক। এই মজলিসে পদার্পণ করতেন প্রবীণ ও নবীন বহু বিখ্যাত সাহিত্যিক। অবনীন্দ্রনাথ মাঝে মাঝে সেখানে গিয়ে শুনিয়ে আসতেন স্বরচিত ছোট ছোট হাস্যনাট্য বা নক্সা। তাঁর পাঠ হ’ত একসঙ্গে আবৃত্তি ও অভিনয়। লেখার ভিতরে যেখানে গান থাকত, নিজেই গুনগুন ক’রে গেয়ে আমাদের শুনিয়ে দিতেন, গানে সুর সংযোগও করতেন নিজেই। শুনেছি কোন কোন যন্ত্রও তিনি বাজাতে পারেন।
চলমান জল দেখতে তিনি ভালোবাসতেন। পরীতে সাগরসৈকতে একখানি বাড়ী করেছিলেন, নাম দিয়েছিলেন “পাথারপুরী”। মাঝে মাঝে সেখানে গিয়ে কিছুকাল কাটিয়ে আসতেন। কলকাতাতেও এক সময়ে প্রত্যহ সকালে গঙ্গাবক্ষে স্টিমারে চ’ড়ে বেড়িয়ে আসতেন বহুদূর পর্যন্ত। সেই গঙ্গাভ্রমণ উপলক্ষ্যে তাঁর কয়েকটি চমৎকার রচনা আছে।
আমিও কলকাতার গঙ্গার ধারে বাড়ী করেছি শুনে তিনি ভারি খুসি। উৎসাহিত হয়ে বললেন, “আমাকেও গঙ্গার ধারে একখানা বাড়ী দেখে দাও না!”
কিন্তু তাঁর গঙ্গার ধারে থাকা আর হয় নি। তবে এখন তিনি যেখানে বাস করছেন, সেও মনোরম ঠাঁই। নেই সহরের গণ্ডগোল, নিরিবিলি মস্ত বাগান। গাছে গাছে বসে পাখীদের গানের সভা, দিকে দিকে নাচে সবুজে সুষমা, ফুলে ফুলে পাখনা দুলিয়ে যায় প্রজাপতিরা, সরোবরে ঢল ঢল করে রোদে সোনালী জ্যোৎস্নায় রূপালী জল। জোড়াসাঁকোর বাড়ীর মত দক্ষিণ দিকে তেমনি প্রশস্ত দরদালান, আবার তিনিও সেখানে আগেকার মতই তেমনি বাগানের দিকে মুখ ক’রে আসনে আসীন হয়ে থাকেন। কিছুদিন আগে গিয়েও দেখেছি, ব’সে ব’সে কাগজের উপরে আঁকছেন একটি ছেলেখেলার কাঠের ঘোড়া।
কিন্তু আজ ব্যাধি ও বার্ধক্য তাঁর হাত করেছে অচল। একদিন
২৪