জীবন্ত মূর্তি ধারণ ক’রে ফিরে এসে দাঁড়ায় বর্তমান কালে। তাঁর ইতিহাস-গ্রন্থাবলীর মধ্যে পাওয়া যায় কত উপন্যাস, কত নাটক ও কত গাথার উপাদান।
অদ্ভুত কর্মী পুরুষ এই স্যর যদুনাথ। তাঁর ধৈর্য, পরিশ্রম ও অনুসন্ধিৎসা সত্য সত্যই অসাধারণ। মোগল সাম্রাজ্যের অধঃপতনের ইতিহাস রচনা করতে কেটে গিয়েছে তাঁর পঞ্চাশ বৎসর। এই কাজে তাঁকে ইংরেজী, ফরাসী, পার্সী, সংস্কৃত, হিন্দী ও মারাঠী ভাষা থেকে অসংখ্য প্রমাণ সংগ্রহ করতে হয়েছে। এ সম্বন্ধে আর কোন ঐতিহাসিকই এমন বিপুল পরিশ্রম স্বীকার করেন নি। মোগল সাম্রাজ্যের বিশেষজ্ঞ হিসাবে ভারতে তিনি অদ্বিতীয়।
কিন্তু ঐতিহাসিক কেবল পরিশ্রমী হ’লেই চলে না। মুটের মত গলদঘর্ম হয়ে খাটবার লোকের অভাব হয় না। ঐতিহাসিককে তথ্য সংগ্রহের সঙ্গে করতে হয় গভীরভাবে মস্তিষ্কচালনা। রীতিমত মাথা খাটিয়ে সংগৃহীত তথ্যগুলিকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে না পারলে ব্যর্থ হয় সমস্ত পরিশ্রম। তথ্যের থাকে দুটি দিক— স্বপক্ষে ও বিপক্ষে। এই দুটি দিক দিয়ে তথ্যগুলিকে ওজন ক’রে দেখতে হয়—এখানে ঐতিহাসিককে হ’তে হবে প্রথম শ্রেণীর অনপেক্ষ সমালোচক। অ্যাবট সাহেব ছিলেন নেপোলিয়ন বোনাপার্টের পক্ষপাতী জীবনীকার। কিন্তু তাঁর লিখিত বিশাল গ্রন্থের মধ্যে প্রকৃত নেপোলিয়নকে দেখতে পাওয়া যায় না। অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়ও সিরাজ-জীবনী রচনা করেছেন সিরাজের বিরুদ্ধে যে-সব ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়, সে দিকে না তাকিয়েই। কিন্তু স্যর যদুনাথ এ শ্রেণীর ঐতিহাসিক নন। তাঁর প্রকাণ্ড গ্রন্থ “ঔরংজেবের ইতিহাস” ও শিবাজীর জীবনচরিত পাঠ করলেই সকলে বিশেষভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন, প্রত্যেক ঐতিহাসিক চরিত্রকেই তিনি চারিদিক থেকে দেখতে চেষ্টা করেছেন পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে। তিনি কোন তথ্য ব্যবহার করেছেন গুণ দেখাবার জন্যে এবং দোষ দেখাবার জন্য ব্যবহার করেছেন কোন তথ্য। আবার বহু তথ্যকে পরিত্যাগ করেছেন। লোভনীয় হ’লেও অবিশ্বাস্য বলে।
স্যর যদুনাথের সমগ্র জীবন কেটে গিয়েছে শিক্ষাব্রত ও
২৮