তাঁর বয়স তিরাশী বৎসর। কিন্তু আজও তাঁর মনীষা, মস্তিষ্ক চালনার শক্তি ও কর্ম তৎপরতা অটুট আছে। চিরদিনই তিনি মৌলিক গবেষণার পক্ষপাতী। বয়স হয়েছে ব’লে অলস হয়ে বসে থাকতে ভালোবাসেন না। এখন গত ষাট—বাষট্টি বৎসরের ঐতিহাসিক গবেষণা নিয়ে তুলনামূলক আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে আছেন।
আমাদের অধিকাংশ ঐতিহাসিক টেবিলের সামনে চেয়ারাসীন হয়ে পুঁথিপত্রের মধ্যেই কালযাপন করেন। কিন্তু যে যে দেশের ইতিহাস বা ঐতিহাসিক ঘটনার কথা বলবেন, স্যর যুদনাথ স্বয়ং বার বার সেই সব দেশে গিয়ে স্বচক্ষে ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করলে নিশ্চিন্ত হ’তে পারেন না। মহারাষ্ট্র প্রদেশে গিয়েছেন উপর উপরি পঞ্চাশবার। ঔরংজেব যেখানে যেখানে গিয়ে যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত হয়েছেন, বার বার সেই সব স্থান নিজের চোখে দেখে এসেছেন। এই রকম দেশভ্রমণের ফলে তাঁর দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছে বহু নূতন নূতন তথ্য। নানা জায়গা থেকে তিনি সংগ্রহ ক’রে এনেছেন ঔরংজেব ও তাঁর সমসাময়িক ব্যক্তিদের পাঁচ হাজার পত্র।
যাঁরা সস্তায় কিস্তিমাৎ ক’রে নাম কিনতে চান, তাঁদের উপরে স্যর যদুনাথের কিছুমাত্র শ্রদ্ধা নেই। গায়ে হাওয়া লাগিয়ে দুই-চারখানা ইংরেজী কেতাব প’ড়ে যা হোক কিছু একটা খাড়া ক’রে দিলেই চলে না। তিনি জীবনব্যাপী সাধনা করেছেন হঠযোগীর মত। মাত্র দুই তিনটি পংক্তির জন্যে তাঁকে রাশি রাশি প্রমাণ সংগ্রহ করতে হয়েছে, হয়েতো কেটে গিয়েছে দিনের পর দিন। যত দিন না নিজের ধারণা সম্পূর্ণ হয়ে ওঠে, ততদিন গভীর চিন্তায় নিযুক্ত থাকতে হয়েছে। লোকপ্রিয়তা অর্জন করবার জন্যে কোনদিন তিনি সত্যকে বিকৃত বা অতিরঞ্জিত করতে যাননি। অথচ যা করেছেন, সহানুভূতির সঙ্গেই করেছেন, কোনরকম বিরুদ্ধ ভাবের আশ্রয় নেননি।
১৯১৫ খৃষ্টাব্দ। মহারাজাধিরাজ বিজয়চাঁদ মহাতাবের আমন্ত্রণে সে বৎসরে বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মিলনীর অধিবেশন হয় বর্ধমানে। সাহিত্য সম্মিলনীতে এত ঘটা আর কখনো দেখিনি। এই রেশনের ও দূর্ভিক্ষের যুগে সেদিনকার রাজকীয় ভূরিভোজনের আয়োজনকে গতজন্মের স্বপ্ন ব’লে মনে হয়। সে রকম সব খাবারও আর তৈরি
৩০