করুণানিধান সম্বন্ধে একজন লিখেছেন: “ইনি পঞ্চকোট পাহাড়ের উপরে আদরা ষ্টেশনের কাছে ‘শৈলকুটীর’ নামে একটি আশ্রম নির্মাণ করেন। এইখানেই ইঁহার কবিতার প্রথম বিকাশ।”
শৈল সানুদেশে অনন্ত নীলিমার তলায় নিরালা পর্ণকুটীর, চোখের সামনে হয়তো জাগত প্রান্তরবাহিনী রবিকরোজ্জ্বলা নটিনী তটিনী, শ্রবণে হয়তো ভেসে আসত বিজন কান্তারের অশ্রান্ত মর্মরসঙ্গীত। এই প্রাকৃতিক পটভূমিকার উপরে তরুণ কবির চিত্ত-শতদল ধীরে ধীরে বিকশিত হয়ে ওঠবারই কথা। কিন্তু দুঃখের বিষয় করুণানিধানের প্রথম জীবনের কোন খবরই আমি রাখি না, কারণ আমি ভূমিষ্ঠ হবার প্রায় এক যুগ আগেই তিনি দেখেছিলেন পৃথিবীর আলোক। পরে কবির সঙ্গে প্রগাঢ় বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন করেছিলাম বটে, কিন্তু তিনি তাঁর পূর্বজীবনের কথা নিয়ে কোনদিন আমার সঙ্গে ঘুণাক্ষরেও আলোচনা করেন নি। এমন অনেক কবি ও লেখক দেখেছি, যাঁদের কাছে হচ্ছে নিজের কথাই পাঁচ কাহন। তাঁদের এই অশোভন আত্মপ্রকাশের অতি আগ্রহ যে শ্রোতাদের শ্রবণ-যন্ত্রকে উত্যক্ত ক’রে তুলছে, এটা উপলব্ধি করলেও তাঁরা গ্রাহ্যের মধ্যে আনেন না। করুণানিধান এ দলের লোক নন। তাঁর ভাবভঙ্গি দেখলে মনে হয়, তিনি যেন নিজেকে একজন উঁচু দরের কবি ব’লেই জানেন না। বীণা তো জানে না, সে হচ্ছে স্বর্গীয় সঙ্গীতের স্রষ্টা, সে কথা জানে কেবল বীণাবাদক। কবি করুণানিধানও হচ্ছেন বাণীর হাতের বীণাযন্ত্রের মত।
যতদূর স্মরণ হয়, করুণানিধান যখন উদীয়মান, সত্যেন্দ্রনাথ তখনও কাব্যজগতে প্রকাশ্যভাবে দেখা দেন নি। তবে যতীন্দ্রমোহন বাগচী পরিচিত হয়েছিলেন তাঁর আগেই। সর্বপ্রথমে “বঙ্গমঙ্গল” নামে একখানি ছোট কবিতার বই পড়ে আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় করুণানিধানের দিকে। রবীন্দ্রনাথের নব পর্যায়ের “বঙ্গদর্শন” তখনও বোধ হয় চলছিল। তারপর “প্রসাদী” (সে বইখানিও আকারে বড় নয়) পাঠ ক’রে আমি তাঁর ভক্ত হয়ে পড়লুম।
মৃত্যুশয্যাশায়ী কবি রজনীকান্ত যখন রোগযন্ত্রণাগ্রস্ত দেহ
৩৪