দলাদলির বাইরে ছিলেন না, তাঁর মনও ছিল ঈর্ষা থেকে সম্পূর্ণ নির্মুক্ত। একদিনও তাঁকে অন্য কবির বিরুদ্ধে একটিমাত্র কথা বলতে শুনি নি, অধিকাংশ কবিই যে দুর্বলতা দমন করতে পারেন না।
করুণানিধানের প্রথম জীবনের বন্ধু, স্বর্গীয় সাহিত্যিক চারুচন্দ্র মিত্র একদিন আমাকে বললেন, “করুণার কাছ থেকে বাংলাদেশের এক বিখ্যাত কবি (তাঁর নাম এখানে করলুম না) তাঁর নূতন কবিতার খাতা পড়বার জন্যে চেয়ে নিয়েছিলেন। কিছুদিন পরে খাতাখানা আবার ফিরে এল বটে, কিন্তু তাঁর রচনাগুলি ছাপা হবার আগেই দেখা গেল, সেই বিখ্যাত কবির নবপ্রকাশিত কবিতাগুলির মধ্যে রয়েছে করুণার নিজের উদ্ভাবিত সব বাক্য।” সাহিত্যক্ষেত্রে রচনাচৌর্যের দৃষ্টান্ত দুর্লভ নয়। আমাকেও এজন্যে একাধিকবার বিড়ম্বনা ভোগ করতে হয়েছে, কিন্তু তবু আমি উচ্চবাচ্য করিনি এবং এ শিক্ষা লাভ করেছি আমি করণানিধানের কাছ থেকেই। ঐ বিখ্যাত কবি ছিলেন আমাদের দুজনেরই বন্ধু। কিন্তু করুণানিধানের নিজের মুখ থেকে তাঁর ঐ কবিবন্ধুর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগই শ্রবণ করি নি।
করুণানিধান কবিতা, তার আদর্শ বা তার রচনা-পদ্ধতি প্রভৃতি নিয়ে বড় বড় ও ভারি ভারি বচন আউড়ে কোনদিন আসর গরম করবার চেষ্টা করেন নি। ও-সব বিষয়ে তাঁর একান্ত মৌনব্রত দেখে যে কোন বাক্তি সন্দেহ করতে পারত যে, উচ্চশ্রেণীর কাব্যকলা সম্বন্ধে হয়তো তাঁর যথেষ্ট জ্ঞান নেই। কিন্তু মাঝে মাঝে তাঁকে একান্তে পেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠের কাছে তরুণ শিক্ষার্থীর মত আমি কাব্যকলাকৌশল সম্বন্ধে যখন প্রশ্ন করতুম, তখন তিনি সে সব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পারিতেন না এবং সেই সব উত্তরের মধ্যেই থাকত কবিতার আর্ট ও ছন্দ সম্বন্ধে বহু জ্ঞাতব্য তথ্য। এইজন্যে আজও তাঁর কাছে আমার ঋণ স্বীকার করতে পারি অকুণ্ঠ কণ্ঠেই।
এবং তিনি যে কত বড় কাব্যকলাবিদ, তাঁর কবিতাবলীর মধ্যেই আছে তার অজস্র প্রমাণ। “প্রসাদী”র পর যখন তাঁর নূতন কবিতার পুঁথি “ঝরাফুল” প্রকাশিত হ’ল, রসিকসমাজ তখনই পেলেন
৩৬