ছিল না বটে কিন্তু সেই দেহের তুলনায় পরে তার যে চেহারা হয়েছিল, তা অবিশ্বাস্য বলা যেতেও পারে। তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালে নিজেকে মনে হ’ত যেন মাতঙ্গের পাশে পতঙ্গ।
বলবান লোকদের দেখবার জন্যে বরাবরই আমার মনের ভিতরে আছে উদগ্র আগ্রহ। বাল্যকাল থেকেই এ-পাড়ায় ও-পাড়ায় নানা আখড়ায় কুস্তি লড়া দেখতে যেতুম। কোথাও দঙ্গলের ব্যবস্থা হয়েছে শুনলে সেখানে যাবার প্রলোভন কিছুতেই সংবরণ করতে পারতুম না। বহুকাল (অর্দ্ধ শতাব্দীরও) আগে কলকাতার মার্কাস স্কোয়ারে কাল্লুর সঙ্গে কিক্কর সিংয়ের কুস্তি প্রতিযোগিতা হয়। তখন গামার নাম কেউ জানত না, কিন্তু কাল্লু ও কিক্কর ছিলেন ভারতবিখ্যাত। টিপে টিপে মায়ের পা ব্যথা ক’রে দিয়ে কত খোসামোদের ও অশ্রুত্যাগের পর যে সেই কুস্তি দেখবার জন্যে অর্থ সংগ্রহ করেছিলুম, তা আজও আমার স্মরণ আছে।
কিক্করের চেহারা ছিল যেমন কুৎসিত, তেমনি ভয়াবহ। মাথায় তিনি সাড়ে ছয় ফুটের চেয়ে কম উঁচু ছিলেন না এবং চওড়াতেও তাঁর দেহ ছিল যে কতখানি, বললে সে কথা কেউ বোধ হয় বিশ্বাস করবেন না (বিশেষজ্ঞের মুখে শুনেছি, তাঁর বুকের ছাতির মাপ ছিল আশী ইঞ্চি— যে কথা শুনলে স্যাণ্ডো সাহেবও নিশ্চয় বিস্ময়ে হতবাক না হয়ে পারতেন না)। আমি অনেক বড় বড় পালোয়ান দেখেছি, কিন্তু লম্বায়-চওড়ায় তাঁদের কেউই কিক্কর সিংয়ের সমকক্ষ নন। কাল্লু ও ছিলেন বিপুলবপু, কিন্তু তাঁর বিপুলতা কিক্করের সামনে মোটেই দৃষ্টি আকর্ষণ করত না। কাল্লু যে কিক্করকে হারাতে পারবেন, দেখলে তা কিছুতেই মনে করা যেত না। বর্তমান নিবন্ধমালায় স্বর্গীয় গুণীদের নিয়ে আলোচনা করবার কথা নয়, অতএব আমি সে মল্লযুদ্ধের বর্ণনা দিতে চাই না। কেবল এইটুকুই ব’লে রাখলেই যথেষ্ট হবে যে, ডেভিডের কাছে গোলিয়াথের মত কাল্লুর কাছে কিক্করও হয়েছিলেন পরাভূত।
তার কয়েক বৎসর পরে মিনার্ভা রঙ্গমঞ্চের উপরে আমি যে মহাবলবান মানুষটিকে দেখি, বিশেষ কারণে এখানে তাঁর নাম উল্লেখযোগ্য। কারণ তাঁর কাছ থেকে প্রেরণা লাভ ক’রেই ভারতের
৪০