দেশে দেশে—এমন কি বাংলাতেও শত শত যুবক দৈহিক শক্তিচর্চায় একান্তভাবে অবহিত হয়েছে। আমি রামমূর্তির কথা বলছি। তিনি শারীরিক শক্তির যে সব অভাবিত পরিচয় দিয়েছিলেন, সেদিন সকলেরই কাছে তা ইন্দ্রজালের মতই আশ্চর্য ব’লে মনে হয়েছিল। তারপরে অনেকেই তাঁর কয়েকটি খেলার নকল ক’রে নাম কিনেছেন ও কিনছেন বটে, কিন্তু তাঁর অধিকতর দূরূহ কয়েকটি খেলা আজও কেউ চেষ্টা ক’রেও আয়ত্তে আনতে পারেন নি। কারণ সে খেলাগুলির মধ্যে ফাঁকি বা প্যাঁচ ছিল না, রামমূর্তির মত অমিত শক্তির অধিকারী না হ’লে কারুরই সে সব খেলা দেখাবার সাধ্য হবে না। রামমূর্তির প্রদর্শনী ছিল কেবল বাহুবল দেখাবার জন্যে নয়, অর্থ উপার্জনের জন্যেও বটে। তাই কোন কোন খেলাতে তিনি দর্শকদের চমকে অভিভূত ক’রে দিতেন। কিন্তু যেখানে কৌশলের উপর থাকে প্রকৃত শক্তির প্রাধান্য, সেখানে রামমর্তি আজও অদ্বিতীয় হয়ে আছেন।
আমি বাল্যকালেও দেখেছি, কলকাতার বহু বনিয়াদী ধনীর বাড়ীতে ছিল স্থায়ী কুস্তির আখড়া। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সম্পদের জন্যে বিখ্যাত জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ীতেও ছিল পরিবারের ছেলেদের জন্যে নিয়মিত কুস্তি লড়বার ব্যবস্থা এবং কবীন্দ্র রবীন্দ্রনাথকেও কুস্তি লড়ার অভ্যাস করতে হ’ত। হয়তো সেইজন্যেই তিনি লাভ করেছিলেন অমন সুগঠিত পুরুষোচিত দেহ। তাঁর পিতামহ “প্রিন্স” দ্বারকানাথ ছিলেন সৌখীন কুস্তিগীর।
কিন্তু বাঙালী নিজেকে যতই সভ্য ও শিক্ষিত ব’লে ভাবতে শিখলে, ব্যায়াম ও কুস্তি প্রভৃতিকে ততই ঘৃণা করতে লাগল। তার ধারণা হ’ল, ও-সব হচ্ছে নিম্নশ্রেণীর নিরক্ষর ব্যক্তির ও ছোটলোকের কাজ। অথচ যে-দেশ থেকে সে লাভ করেছে আধুনিক শিক্ষা ও সভ্যতা, সেই প্রতীচ্যের উচ্চ-নীচ সর্বসাধারণের মধ্যে পুরুষোচিত ব্যায়াম ও খেলাধূলার লোকপ্রিয়তা যে কত বেশী, সেদিকে একবারও দৃষ্টিপাত করা দরকার মনে করেনি। সবল ইংরেজের কাছে দুর্বল বাঙালী প’ড়ে প’ড়ে মার খেত, তবু তার হুঁশ হ’ত না।
কিন্তু তারও ভিতরে ছিল যে একটা subconscious বা
৪১