অব্যক্তচেতন মন, সেটা টের পাওয়া গিয়েছিল মোহনবাগান যেদিন ফুটবল খেলার মাঠে “শীল্ড ফাইন্যালে” প্রথম গোরার দলকে হারিয়ে দেয়। শত শত জ্বালাময়ী বক্তৃতাও যে বাঙালীর প্রাণে প্রেরণা সঞ্চার করতে পারে নি, একটি দিনের একটি মাত্র ঘটনায় তা হয়ে উঠল আশ্চর্যভাবে অতিশয় জাগ্রত। ইংরেজী সংবাদপত্রে সেই সময়ে এই গল্পটি প্রকাশিত হয়েছিলঃ মোহনবাগানের বিজয়গৌরবে চারদিকে যখন সাড়া প’ড়ে গিয়েছে, তখন চৌরঙ্গীর রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল দুই ব্যক্তি, তাদের একজন বাঙালী, আর একজন ইংরেজ। তারা পরস্পরের বন্ধু। বাঙালী পথিকটি বার বার এগিয়ে যাচ্ছে দেখে ইংরেজ সঙ্গীটি জিজ্ঞাসা করে, “তোমার আজ এ কি হ’ল বলতো? তুমি আমাকে বার বার পিছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছ কেন?” বাঙালী জবাব দেয়, “দেখছ না, আজ আমাদের জাতিই যে এগিয়ে চলেছে।” কথাগুলি আমার এতই ভালো লেগেছিল যে আজ পর্যন্ত ভুলতে পারিনি।
আজকাল বাতাস কিছু বদলেছে। কিছুকাল থেকে দেখছি বাঙালী যুবকরাও দেহচর্চায় মন দিয়েছে এবং ব্যায়ামের নানা বিভাগে দেখাচ্ছে অল্পবিস্তর পারদর্শিতা। আদর্শ দেহ গঠনে, পেশী শাসনে, ভারোত্তোলনে, মুষ্টিযুদ্ধে ও বাৎসরিক কুস্তি প্রতিযোগিতায় বাঙালী যুবকদের কৃতিত্বের কথা শুনে এই প্রাচীন বয়সেও আমি তরুণের মত উৎফুল্ল হয়ে উঠি। কিন্তু এইখানেই যথেষ্ট হয়েছে ভেবে থামলে চলবে না—অগ্রসর হ’তে হবে, আরো অনেক দূর অগ্রসর হ’তে হবে, শাক্ত জাতি হিসাবে আমাদের আসন সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে বিশ্বসভার মাঝখানে।
জ্ঞানে নয়, বিদ্যায় নয়, সভ্যতায় নয়, সংস্কৃতিতে নয়, কেবলমাত্র পশুশক্তির সাহায্যে ভারতবর্ষের উপরে প্রভুত্ব বিস্তার করেছিল মুসলমানরা। এবং আজ পর্যন্ত নিরক্ষর মুসলমানরাও কেবল দৈহিক শক্তিসাধনারই দ্বারা ভারতের অন্যান্য জাতিদের পিছনে ঠেলে শীর্ষস্থান অধিকার ক’রে বিশ্ববিখ্যাত হয়ে আছে। আজ ভারতের তথা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মল্ল কে? গামা এবং তার ছোট ভাই ইমাম বক্স। গামার বয়স বোধ করি এখন সত্তরের উপরে এবং
৪২