ইমামেরও ষাটের উপরে। কিন্তু এখনো গামা যে-কোন যুবক প্রতিদ্বন্দ্বীরও সঙ্গে শক্তিপরীক্ষা করতে প্রস্তুত। বলেছেন, “যে আমার ছোট ভাই ইমামকে হারাতে পারবে, তার সঙ্গেই আমি লড়তে রাজি আছি।” কিন্তু ভারত বা য়ুরোপের কোন মল্লই তাঁর এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে সাহসী নয়। গামা অপরাজেয় হয়েই রইলেন। তাঁর আগে গোলাম পালোয়ানও ছিলেন এমনি অতুলনীয়।
কেবলই কি গামা ও ইমাম? তাঁদের ঠিক নীচের থাকেই যাঁরা আছেন—যেমন হামিদা, গুঙ্গা, হরবল্স সিং, সাহেবুদ্দীন ও ছোট গামা প্রভৃতি আরো অনেকে (এখানে অকারণে সকলের নাম ক’রে লাভ নেই, তাঁদের মধ্যে এক হরবন্স সিং ছাড়া আর সকলেই মুসলমান।
সেটা ১৯১৬ কি ১৯১৭ খৃস্টাব্দ আমার ঠিক মনে নেই। আমি তখন কাশীধামে। গামা তখন ইংলণ্ডে গিয়ে জন লেম ও বড় বিস্কো প্রভৃতি পাশ্চাত্যদেশের শীর্ষস্থানীয় পালোয়ানদের হারিয়ে পৃথিবীজোড়া উত্তেজনা সৃষ্টি ক’রে দেশে ফিরে এসেছেন। দুইজন স্থানীয় বন্ধুর সঙ্গে দশাশ্বমেধ ঘাটে যাবার বড় রাস্তায় ভ্রমণ করছি, হঠাৎ বন্ধুদের একজন বললেন, “ঐ দেখুন, গামা পালোয়ান যাচ্ছেন।”
সাগ্রহে তাকিয়ে দেখলুম। পথ দিয়ে যাচ্ছেন কয়েকজন লোক, সকলেরই চেহারা বলিষ্ঠ। কিন্তু তাঁদের মধ্যে একজন আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন মধ্যমণির মত। মাথায় পাগড়ী, গায়ে চুড়ীদার পাঞ্জাবী, পরনে লুঙ্গি, পায়ে নাগরা জুতো—পোষাকে আছে রংবেরঙের বাহর। দাড়ী কামানো, মস্ত গোঁফ। দেহ অনাবৃত নয় বটে, কিন্তু বস্ত্রাবরণ ঠেলে তাঁর সর্বাঙ্গ দিয়ে বেরিয়ে আসছে যেন একটা প্রবল শক্তির উচ্ছ্বাস। ভাবভঙ্গিও প্রকাশ করছে তাঁর বিশেষ বীর্যবত্তা। অসাধারণ চোখের দৃষ্টি ফুটিয়ে তোলে ব্যক্তিত্বকে। গামা চলে গেলেন, আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলুম। মন বললে, দেখলুম বটে এক পুরুষসিংহকে।
তার কয়েক বৎসর পরে গামাকে দেখি কলকাতায়। তারিখ সম্বন্ধে আমার একটা দুর্বলতা আছে। আমি বাল্যকালের সব কথাও হুবহু মনে রাখতে পারি, কিন্তু দশ-পনেরো বৎসর আগেকার কোন
৪৩