বিশেষ তারিখ স্মরণ করতে পারি না। তবে মনে হচ্ছে অন্ততঃ বত্রিশ বৎসর আগে কলকাতায় গড়ের মাঠে তাঁবু ফেলে মস্ত এক কুস্তি-প্রতিযোগিতা হয়েছিল। ভারতের নানা প্রদেশ থেকে এসেছিলেন নামজাদা পালোয়ানরা— কেউ কুস্তি লড়তে, কেউ কুস্তি দেখতে। আমি একদিন সেই কুস্তির আসরে গিয়েছিলুম, গামার সঙ্গে হাসান বক্সের প্রতিযোগিতা দেখবার জন্যে। কিন্তু স্মরণ হচ্ছে অন্যান্য পালোয়ানদের কুস্তি হয়েছিল একাধিক দিবস ধ’রে।
আমি যেদিন যাই, সেদিন আমার সঙ্গে ছিলেন স্বর্গত বন্ধুবর শ্রীশচন্দ্র গুহ। তিনি ছিলেন কেম্ব্রিজের বক্সিং-এ “হাফ-ব্লু”, পরে ব্যারিস্টার হয়ে দেশে ফিরে কিছুকাল প্র্যাকটিস ক’রে মালয়ে গিয়ে আইন ব্যবসায়ে যথেষ্ট নাম কেনেন এবং নেতাজীর “আই-এন-এ”র এক পদস্থ কর্মচারী হন। সেই অপরাধে ইংরেজরা তাঁকে বন্দী করে। পরে তিনি মুক্তিলাভ ক’রে আবার দেশে ফিরে আসেন। এই সেদিন তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
তাঁবুর ভিতরে বৃহতী জনতা। তার মধ্যে বাঙালী খুব কম, অধিকাংশই মুসলমান ও হিন্দুস্থানী- তারা চারিধারের গ্যালারি দখল ক’রে ব’সে হাটবাজারের সোরগোল তুলেছে। রাজ্যের পালোয়ান সেখানে এসে জুটেছেন, তাঁদের মধ্যে দেখলুম বন্ধুবর শ্রীযতীন্দ্র গুহ বা গোবরবাবুকেও। সেদিনকার কুস্তির বিচারক ছিলেন মুর্শিদাবাদের নবাব বাহাদুর।
প্রথম দুই-তিনটি কুস্তির পরেই শুনলুম এইবার হবে ভীম ভবানীর সঙ্গে ছোট গামার প্রতিযোগিতা। এই গামা হচ্ছেন প্রখ্যাত কাল্লু পালোয়ানের ছেলে। তিনি তখন সবে যৌবনে পা দিয়েছেন, দেহ রীতিমত তৈরি, তার কোথাও মেদবাহুল্য নেই। কুস্তির খানিক আগে থাকতেই তিনি একটা কাঠের থাম ধ’রে দেহকে গরম করবার জন্যে খুব স্ফূর্তির সঙ্গে ক্রমাগত বৈঠক দিতে সুরু করলেন।
তারপর ভীম ভবানীর সঙ্গে ছোট গামার কুস্তি আরম্ভ হ’ল। ভবানী বয়সেও বড় এবং তাঁর বিপুল দেহও অত্যন্ত গুরুভার— চটপটে ছোট গামাকে এঁটে উঠতে না পেরে তিনি নিলেন মাটি—অর্থাৎ আখড়ার উপরে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লেন। ছোট
৪৪