অনায়াসেই। কেবল তাই নয়। মার্গসঙ্গীতের যে সব রাগরাগিণী আগে নিজেদের কৌলীন্যগর্ব বজায় রাখবার জন্যে লোকসাধারণের পথ মাড়াতে রাজি হ’ত না, তিনি তাদেরই ধ’রে মেঠো ভাটিয়ালী ও বাউল প্রভৃতি চল্তি সুরের সঙ্গে মিলিয়ে অচ্ছেদ্য বন্ধনে বেঁধে সৃষ্টি ক’রে গিয়েছেন অপূর্ব সৌন্দর্যলোক।
নৃত্যশিল্পী উদয়শঙ্কর বলেছেন, “Everything is Folk!” তাঁর মতে, ভারতের মত লোকনৃত্যের বিপুল ভাণ্ডার পৃথিবীর আর কোথাও নেই। যথার্থ গুণীর হাতে যথাযথভাবে ব্যবহৃত হ’লে লোকনৃত্যও অনন্যসাধারণ হয়ে উচ্চশ্রেণীর রূপরসিকদেরও আনন্দ বিধান করতে পারে। উদয়শঙ্করের এই মত যে অভ্রান্ত, তাঁর দ্বারা পরিকল্পিত গ্রাম্য উৎসব ঘেসেড়া, ভীল, বিদায়ী ও রাসলীলা প্রভৃতি নৃত্য দেখলেই বুঝতে বিলম্ব হয় না।
দরিদ্ররা ধনপতি হ’লে পূর্ব-দারিদ্র্যের কথা ভুলে যায়, নিজেদের উচ্চতর শ্রেণীর লোক ব'লে মনে করে। তাদের বংশধররা আবার আরো উঁচু ধাপে উঠে নিজেদের অভিজাত ব’লে ভাবতে থাকে এবং জনসাধারণের সঙ্গে সম্পর্ক পর্যন্ত তুলে দিতে চায়। সকল শ্রেণীর শিল্পই ছিল আগে লোকশিল্প। কবিতা, গান, নাচ ও ছবির জন্ম হয় লোকসাধারণের মধ্যেই। তারপর সভ্যতা ও সংস্কৃতির ক্রমোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আর্ট ভুলে যায় নিজের শৈশবের কথা, লোকসাধারণের ধারণার বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে সগর্বে প্রচার করে—আমি অভিজ্ঞ, আমি বড়লোক, আমি ছোটলোকের খেলনা নই।
দশ হাজার বৎসর আগে ফ্রান্স ও স্পেন ছিল অসভ্য। কিন্তু তখনকার শিল্পীরা গিরিগুহার দেওয়ালে যে সব ছবি এঁকে রেখেছিল, বর্তমান যুগের মানুষরাও তা দেখে অবাক হয়ে যায়। তারপর যুগে যুগে চিত্রকলা যাত্রা করেছে বিভিন্ন পথে, নিজেকে আবদ্ধ করেছে নানা বিধিবিধানের বন্ধনে, আদিম স্বাভাবিকতা হারিয়ে হরেক রকম ‘ইজম্’-এর দাসত্ব ক’রে হ’তে চেয়েছে বিচিত্র, হ’তে চেয়েছে লোকসাধারণের পক্ষে দুর্বোধ
কিন্তু আজও পৃথিবীর যেখানে যেখানে অসভ্য জাতিরা আদিম মানুষদের মত জীবনযাত্রা নির্বাহ করে, সেখানকার শিল্পীরা কাজ
৪৭