করে, ছবি আঁকে সেই দশ হাজার বৎসর আগেকার পদ্ধতিতেই। কাল হিসাবে দক্ষিণ আফ্রিকার ‘বুসম্যান’রা আধুনিক যুগেরই লোক। কিন্তু তাদের আঁকা ছবি দেখলে মনে পড়বে সেই দশ হাজার বৎসর আগেকার শিল্পীদেরই কাজ—কি রেখায়, কি বর্ণে, কি পরিকল্পনায়। অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের আধুনিক বংশধরদের দ্বারা অঙ্কিত চিত্র সম্বন্ধেও প্রায় ঐ কথাই বলা যায়।
পাশ্চাত্য দেশের একাধিক অতি-আধুনিক শিল্পী ফিরে যেতে চাইছেন আবার প্রাগৈতিহাসিক যুগের দিকে। ফোর্ড ম্যাডক্স ব্রাউন, হোলম্যান হাণ্ট ও রোসেটি প্রভৃতি ঊনবিংশ শতাব্দীর কয়েকজন চিত্রকরের দৃষ্টি ছিল যেমন রাফাএল প্রভৃতির পূর্ববর্তী যুগের দিকে, এঁরাও তেমনি আকৃষ্ট হয়েছেন দশ হাজার বৎসর আগেকার শিল্পীদের দ্বারা। তাই এঁদের হাতের কাজে খুঁজে পাওয়া যায় আদিম শিল্পের প্রভাব। হয়তো এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সার্বজনীন হবে না এবং হয়তো দীর্ঘস্থায়ী হবে না চলমান মেঘের ছায়ার মত এই সাময়িক রেওয়াজ, তবু আদিম কালের স্বতঃস্ফূর্ত স্বাভাবিকতা যে আকৃষ্ট করেছে অতি-আধুনিকদেরও, সে বিষয়ে কোনই সন্দেহ নেই। কেবল আদিম ছবি কেন, শিশুদের আঁকা যে সব ছবি দেখলে আগে আমাদের কাকের ছানা বকের ছানার কথা স্মরণ হ’ত, তার ভিতরেও এঁরা পাচ্ছেন নূতন নূতন সৌন্দর্যের সন্ধান।
আমাদের দেশেও প্রকাশ পাচ্ছে একটা নূতন দৃষ্টিভঙ্গি।
ছেলেবেলায় যখন গুরুজনদের সঙ্গে কালীঘাটে যেতুম এবং চিত্রকলার ভালো-মন্দ কিছুই বুঝতুম না, তখন আমাকে সবচেয়ে আকৃষ্ট করত সেখানকার পটুয়ারা। তাদের কর্মশালার প্রান্তে চুপ ক’রে দাঁড়িয়ে কৌতূহলী ও বিস্মিত চোখে নিরীক্ষণ করতুম পটয়াদের হাতের কাজ। নিজের মনে তারা এঁকে যেত ছবির পর ছবি, কেমন নিশ্চিত হাতে রেখার পর রেখা টেনে, কত অবলীলাক্রমে। অধিকাংশই ছিল গার্হস্থ্য ছবি, লোকে হেলাভরে বলত কালীঘাটের পট। সেগুলিকে কেউ আর্টের নিদর্শন ব'লে গ্রহণ করত না এবং তাদের ক্রেতাও ছিল না শিক্ষিত ভদ্রলোকরা। কিন্তু আজ উচ্চশ্রেণীর রূপ-
৪৮