রসিকদের মুখেও তাদের প্রশংসা শোনা যায় এবং ঘটা ক’রে কালীঘাটের পটের প্রদর্শনী খুললে তা দেখবার জন্যে মনীষীরাও আগ্রহ প্রকাশ করেন। আগে আমরা যাদের তাচ্ছিল্য করে ‘পোটো’ ব’লে ডাকতুম, আজ তাদের শিল্পী ব’লে স্বীকার করতেও আমরা নারাজ নই। দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে বৈ কি। আর তা বদলাচ্ছে ব’লেই আজ শিল্পী যামিনী রায় পেয়েছেন অসংখ্য সমঝদার।
কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গি সহজে বা অকারণে বদলায় না, তা পরিবর্তিত হ’তে পারে প্রতিভার প্রভাবেই। অনেকদিন আগে থেকেই বাংলা দেশে সচিত্র প্রাচীন পুঁথি প্রভৃতি আবিষ্কৃত হয়ে আসছে, সেই সব পটের সঙ্গে আমাদের শিক্ষিত ব্যক্তিরা ছিলেন সুপরিচিত। তাদের বিষয়বস্তু, তুলির লিখন এবং পরিকল্পনা কালীঘাটের পটের চেয়ে যথেষ্ট উন্নত হ’লেও তা দেখে কারুর মনে জাগেনি কোন সম্ভাবনার ইঙ্গিত। সংস্কৃত ভাষারও চেয়ে সে সব ছবির ভাষা ছিল অধিকতর মৃত। তা দেখে পরিতৃপ্ত হ’ত নয়নমন, ঐ পর্যন্ত। বাউল বা মেঠো সুর শুনেও আমাদের মন নাড়া পেয়েছে, কিন্তু তবু তাদের মুখনাড়া খেতে হয়েছে উপেক্ষণীয় লোকসঙ্গীত ব’লে এবং বৈঠকী ওস্তাদরাও দিতেন না তাদের পাত্তা। তাদের উচ্চাসনে তুলে পঙ্ক্তিভুক্ত করার জন্যে দরকার হয়েছে রবীন্দ্রনাথের মত সরস্বতীর বরপুত্রকে।
বাংলা দেশে বড় বড় শিল্পীর অভাব ছিল না, কিন্তু প্রাচীন বাংলার ঘরোয়া পট রচনা পদ্ধতি অবলম্বন ক’রে যে বর্তমান কালেও যুগোপযোগী উচ্চশ্রেণীর কলাবস্তু প্রস্তুত করা যেতে পারে, এটা দেখবার মত দৃষ্টিশক্তির অভাব ছিল যথেষ্ট। আমাদের শিল্পীরা যখন প্রতীচ্যের নানাবিধ “ইজম”-এর দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে আত্মপ্রকাশের পথ খুঁজে পাচ্ছেন না, যামিনী রায় তখন রূপলক্ষ্মীর মূর্তি গঠনের জন্যে উপকরণ সংগ্রহে নিযুক্ত হলেন গৌড় বাংলার নিজস্ব ঐশ্বর্য-ভাণ্ডারে। কিন্তু তিনিও একেবারে নিজের পথ কেটে নিতে পারেন নি। প্রথম প্রথম তিনিও এমন সব ছবি এঁকেছিলেন, যাদের ভিতর থেকে আবিষ্কার করা যায় পাশ্চাত্য প্রভাব, চৈনিক প্রভাব বা অন্য কোন প্রভাব। তারপর তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী বদলে
৪৯