পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিচালক প্রবোধ গুহ

তাঁকে আক্রমণ করতে পারে না। কাজ, কাজ, সর্বদাই কাজ চাই। একাই হ’তে চান একশো।

 শিশিরকুমার নিজের সম্প্রদায় নিয়ে আত্মপ্রকাশ করলেন। আমরাও সবান্ধবে যোগ দিলুম তাঁর সঙ্গে। ফলে স্টার থিয়েটারে আমাদের যাতায়াত প্রায় বন্ধ হয়ে গেল, কারণ ওখানকার আর্ট সম্প্রদায় প্রতিযোগী শিশির-সম্প্রদায়কে প্রীতির চক্ষে দেখতেন না। আমরা প্রকাশ করলুম সাপ্তাহিক “নাচঘর” পত্রিকা, তার পাতায় থাকত শিশিরকুমারের গ‍ুণপনার পরিচয়। স্টার থিয়েটারের অনুগত ছিল আর একখানি সাপ্তাহিক পত্রিকা, সে নিয়মিতভাবে আমাদের বির‍ুদ্ধে বিষোদ্গার করত; এবং তাকে যে উৎসাহিত করতেন প্রবোধচন্দ্রই, মনে মনে আমি এই সন্দেহ পোষণ করতুম। কাজেই আমার মন যে তাঁর প্রতি অল্পবিস্তর বির‍ূপ হয়ে উঠেছিল, এ কথা অস্বীকার করব না।

 তারপর কয়েক বৎসর কেটে যায়। কিছুদিনের জন্যে রঙ্গালয়ের একঘেয়ে প্রতিবেশ আর ভালো লাগে না, বাড়িতে একান্তে ব’সে সাহিত্যচর্চা করি। সেই সময়েই প্রবোধচন্দ্র নিয়েছেন মনোমোহন থিয়েটারের ভার।

 এক সকালে বৈঠকখানায় ব’সে খবরের কাগজ পড়ছি, হঠাৎ কণ্ঠস্বর শুনলুম―“চলুন”।

 মুখে তুলে দেখি, সামনে দাঁড়িয়ে আছে স্বর্গীয় অভিনেতা সতীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তার বালক বয়স থেকেই তাকে আমি চিনতুম। গোবরবাবুর আখড়ায় কুস্তি ল’ড়ে বপুখানি তার বিপুল হয়ে ওঠে। তারপর কুস্তি ছেড়ে থিয়েটারে ঢোকে। বুদ্ধি কিছু মোটা, কতকটা গোঁয়ার-গোবিন্দ মানুষ।

 সতীশ আবার বললে, “চলুন।”

 আমি বললুম, “চলুন মানে? কোথায় যাব?”

 সতীশ বললে, “মনোমোহন থিয়েটারে। আপনাকে নিয়ে যাবার জন্যে প্রবোধবাবু আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছেন।”

 বললুম, “আমি যাব না। আমার আর থিয়েটার ভালো লাগে না।”

৫৫