বন্ধুত্ববন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি। অনেক দিনই দিবারাত্র একসঙ্গে কাটিয়ে দিয়েছি—একসঙ্গে কাজ করা, একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, একসঙ্গে শোয়া-বসা। দুজনেই পরস্পরকে ভালো ক’রে চিনতে পেরেছি। এবং ঐ মনোমোহন থিয়েটারেই নাট্যপরিচালনায় তাঁর অদ্ভুত কৃতিত্বের সঙ্গে ভালো ক’রে পরিচিত হবার সুযোগ পেয়েছি। তিনি কেবল নাটক নির্বাচন করতেন না, তার পরিবর্তন, পরিবর্জন ও পরিবর্ধনেরও ভার গ্রহণ করতেন। তারপর দৃশ্যপট, সাজপোশাক ও মঞ্চসজ্জার পরিকল্পনা, আলোক-নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিতভাবে মহলা দেবারও ভার থাকত তাঁর উপরে। নাচ, গান ও সুরের উপযোগিতার দিকেও থাকত তাঁর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। রঙ্গালয়ে তাবৎ ব্যাপার নিয়ে বিশেষরূপে মস্তিষ্কচালনা করতেন একমাত্র তিনিই। রঙ্গালয়ে একখানি পূর্ণাঙ্গ নাটক মঞ্চস্থ করবার জন্যে যে কি বিপুল পরিশ্রম ও চিন্তাশীলতার প্রয়োজন হয়, বাইরের কেউ তা কল্পনাতেও উপলব্ধি করতে পারবেন না। নট-নটী, দৃশ্য-পরিকল্পক, নৃত্যবিদ, গীতি-রচয়িতা, সুরশিল্পী, আলোকনিয়ন্তা ও নাট্যকার আপন আপন বিশেষ বিভাগ নিয়েই অবহিত হয়ে থাকেন বটে, কিন্তু একটি মূল ভাব ফুটিয়ে তোলবার জন্যে প্রত্যেককে অবিচ্ছিন্নভাবে একটি নির্দিষ্ট পরিণামের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গেলে পরিচালককে অনন্যসাধারণ সংগঠন-শক্তির পরিচয় দিতে হয়। ভাবুক, কবি, সমালোচক এবং বিভিন্ন শ্রেণীর শিল্পীর বিশেষত্ব সম্বন্ধে অল্পবিস্তর জ্ঞান না থাকলে কেহই হ’তে পারেন না সার্থক পরিচালক। কেবল বাছা বাছা রসিকের নয়; তাঁকে রাখতে হয় জনসাধারণের মনের খবরও।
প্রবোধচন্দ্র সম্বন্ধে আগেই বলেছি, তিনি যেন একাই একশো। তাঁর অসাধারণ কর্মদক্ষতা ও শ্রমশক্তি দেখে বারংবার বিস্মিত না হয়ে পারিনি। নূতন নাটক প্রস্তুত করবার সময়ে দৈনন্দিন জীবনের অন্য কোন কথাই তাঁর মনে থাকত না, স্নানাহার ভুলে তিনি একটানা কাজ ক’রে যেতেন সতেরো—আঠারো ঘণ্টা ধ’রে। নিজেই কখনো তুলি ধ’রে দৃশ্যপটের উপরে বর্ণলেপনে নিযুক্ত হয়েছেন, কখনো কাঁচি ধরে সাজপোশাক তৈরি করেছেন, আবার সে-সব ফেলে ছুটে গিয়েছেন মহলার আসরে, অভিনেতাদের নির্দেশ দিতে দিতে লক্ষ্য
৫৭