সাত
নির্মলচন্দ্র চন্দ্র
সাহিত্যিক ও শিল্পীদের মিলনস্থানকে কেউ যদি “আড্ডা” ব’লে মনে করতেন, তাহ’লে “ভারতী” সম্পাদক মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায় প্রতিবাদ করে বলতেন, “সাহিত্যিকদের আসরকে আড্ডা বলা উচিত নয়। আড্ডা শব্দটির মধ্যে কিছুমাত্র আভিজাত্য নেই। নানা স্থলে তার কদর্থও হ’তে পারে।”
মণিলালের মত সমর্থনযোগ্য।
কিন্তু আটত্রিশ নম্বর কর্ণওয়ালিশ ষ্ট্রীটে দুই যুগ আগে স্বর্গীয় গজেন্দ্রচন্দ্র ঘোষের ভবনে প্রতিদিন বৈকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত যে বৈঠকটি বসত, তাকে আড্ডা বললে অন্যায় হবে না। কারণ সেখানে এসে ওঠাবসা করতেন বটে শিল্পাচার্য অবনীন্দ্রনাথ, সাহিত্যাচার্য শরৎচন্দ্র, নাট্যাচার্য শিশিরকুমার ও সঙ্গীতাচার্য করমতুল্লা খাঁ প্রমুখ তখনকার অধিকাংশ প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও নানা শ্রেণীর শিল্পিগণ, কিন্তু সেই সঙ্গে সেখানে আড্ডা মারতে আসতেন এমন সব ব্যক্তিও অনায়াসেই যাঁদের গোলা লোক বলে গণ্য করা চলে। জ্ঞানী-গুণী-নামীদের সঙ্গে তথাকথিত রাম-শ্যামের সম্মিলন গজেনবাবুর বৈঠকটিকে ক’রে তুলেছিল রীতিমত বিচিত্র। সে বৈঠকে বাদ পড়ত না কোন-কিছুই—জুতো-সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ পর্যন্ত।
ঐখানেই প্রথম আলাপ হয় শ্রীনির্মলচন্দ্র চন্দ্রের সঙ্গে।
তক্তাপোশের উপরে ফরাশ পাতা। মাথার উপরে ঘুরছে বিজলীপাখা। ফরাশের উপরে তাকিয়া এবং তাকিয়ার উপরে আড় হয়ে হেলান দিয়ে আলবালার নলে মাঝে মাঝে টান দিচ্ছেন এবং মাঝে মাঝে কথা কইছেন নির্মলচন্দ্র। দোহারা দেহ। গৌরবর্ণ। সৌম্য, প্রসন্ন মুখ। সম্প্রতি পত্রিকায় পত্রিকায় তাঁর যে-সব প্রতিকৃতি বেরিয়েছে, তার ভিতর থেকে তখনকার নির্মলচন্দ্রের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়
৫৯