না বললেও চলে। বহুকাল পরে কিছুদিন আগে মিনার্ভা থিয়েটারে এক সভায় নির্মলচন্দ্রের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল। “হেমেনদা” ব’লে তিনি যখন আমাকে সম্ভাষণ করলেন, তখন প্রথমটা তাঁকে আমি চিনতেই পারিনি। প্রৌঢ়ত্বের পরে দেহের এই দ্রুত অধঃপতন একটা ট্রাজেডির মত। আমার পনেরো বৎসর আগেকার ফোটোর মধ্যে আমার আজকের চেহারা খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথচ এই পনেরো বৎসরের মধ্যে একটুও বদলায়নি আমার মন। মনে হয়, বিধাতার এটা সুবিচার নয়।
বন্ধুবান্ধবদের দ্বারা পরিবৃত হয়ে আলবলার নল হাতে ক’রে নির্মলচন্দ্র ধীরে-সুস্থে ব’সে ব’সে সকলের সঙ্গে গল্প করছেন এবং যখন-তখন ভিতরে থেকে বাড়ীর গৃহিণী বৈঠকধারীদের জন্যে পাঠিয়ে দিচ্ছেন চায়ের পেয়ালা ভরা ‘ট্রে’র পর ‘ট্রে’ আর রাশীকৃত পানের খিলি ভরা রেকাবির পর রেকাবি। পেয়ালা আর রেকাবি খালি হয়ে যায় ঘন ঘন।
ধোপদস্ত গিলে-করা ফিনফিনে পাঞ্জাবী ও চুনট-করা তাঁতের ধুতি এবং দামী জুতো প’রে প্রবেশ করেন এক বিপুলবপু সুপুরুষ। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় কোন ফুর্ত্তিবাজ সৌখীন যুবক-আসলে কিন্তু তিনি হচ্ছেন পৃথিবীবিখ্যাত প্রত্নবিদ্যাবিদ, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মৌখিক ভাষণেও থাকে না প্রত্নতত্ত্বের ছিটেফোঁটা, বরং জাহির হয় অল্পবিস্তর খিস্তিখেউড়!
আসেন নরহস্তীর মত বিশাল চেহারা নিয়ে আমাদের ‘চিদ্দা’—জনসাধারণের কাছে যিনি হাস্যসাগর চিত্তরঞ্জন গোস্বামী। তাঁর জন্যে আসে শ্বেতপাথরের পেয়ালায় ঢালা চা এবং চায়ে চুমুক দিতে দিতে তিনি সুরু করেন ছেবলামি-ভরা চুটকি গালগল্প এবং কথার পর কথা সাজিয়ে কথার খেল। রাখালের মনের মত জুড়ি। বৈঠকী হাস্যরসাভিনয়ে চিত্তরঞ্জন ছিলেন একেবারেই অতুলনীয়।
আসেন সর্বজনপ্রিয় ‘দাদাঠাকুর’ বা শ্রীশরৎচন্দ্র পণ্ডিত। তিনিও একটি অসাধারণ চরিত্র। তাঁর একটি হাসির রচনায় পরিপূর্ণ পত্রিকা ছিল, নাম “বিদূষক”। তিনি একাই ছিলেন “বিদূষকে”র সম্পাদক, লেখক, মুদ্রাকর, প্রকাশক ও ফেরিওয়ালা। পথে পথে ঘুরে নিজের
৬০