পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
এখন যাঁদের দেখছি

হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই জীর্ণ ভিত যে ভিতর-ফোঁপরা হয়ে এসেছে, এ সন্দেহ, তখনও সে করতে পারেনি। প্রদেশে প্রদেশে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে সন্ত্রাসবাদীরা—বিশেষ ক'রে বাংলা দেশে। তার উপরে মহাত্মা গান্ধী সুরু করলেন অসহযোগ আন্দোলন—নিরস্ত্রের পক্ষে এক নতুন অস্ত্র। অহিংসার দ্বারা হিংসাকে দমন। একদিকে সন্ত্রাসবাদ আর একদিকে অসহযোগ আন্দোলন, মাঝখানে পঁড়ে রক্তশোষক বিদেশী শাসকদের অবস্থা হ'ল অত্যন্ত কাহিল। সিপাহী যদ্ধের সময়ে সহস্র সহস্র অস্ত্রধারী সিপাহীরাও ইংরেজদের এমন কিংকর্তব্যবিমূঢ় ক'রে তুলতে পারেনি। তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেল। হন্তদন্ত হয়ে তারা অবলম্বন করলে দমননীতি। ভাবলে, জেলে পরে, নির্বাসনে পাঠিয়ে ও বুলেট চালিয়ে ভেঙে দেবে দুরন্তদের মেরুদণ্ড।

 সেই চিরস্মরণীয় মুক্তিসংগ্রামের যোদ্ধাদের পুরোভাগে যাঁরা ছিলেন, নির্মলচন্দ্র হচ্ছেন তাঁদেরই অন্যতম। এক একদিন এক একটি ঘটনার সংবাদ বিদ্যুতের মত দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে, আর নির্মলচন্দ্র এলেই আমরা চারিদিক থেকে সাগ্রহে তাঁকে ঘিরে বসি, তাঁর মুখ থেকে ভিতরের কথা শুনতে পাব ব’লে। তিনিও আমাদের আগ্রহ নিবারণ করতে আপত্তি করতেন না। বেশ গুছিয়ে গুছিয়ে আমাদের শোনাতেন তখনকার নানা রাজনৈতিক ঘটনার কথা। তাঁর মুখে আমরা সে যুগের প্রখ্যাত রাজনীতিজ্ঞদের ব্যক্তিগত জীবনেরও অনেক কথা শ্রবণ করেছি।

 কিন্তু কেবল রাজনীতি, আইন ব্যবসায় বা দেশহিতকর বিবিধ কর্তব্য নিয়েই নির্মলচন্দ্র নিজেকে ব্যাপৃত রাখেননি। সাহিত্যিক না হয়েও তিনি সাহিত্যরসিক। নইলে কর্মব্যস্ততার ভিতর থেকে ছুটি নিয়ে যখন-তখন সাহিত্যিকদের সঙ্গে উঠতে বসতে আসতেন না। কথাশিল্পী শরৎচন্দ্রের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব-বন্ধন সদৃঢ় হয়ে উঠেছিল। শরৎচন্দ্রও কিছু কাল রাজনীতি নিয়ে যারপরনাই মাথা ঘামিয়েছিলেন। প্রায়ই গিয়ে হাজির হতেন নির্মলচন্দ্রের ভবনে। তাঁদের দুজনের মধ্যে কে বেশী ক'রে কার প্রেমে মশগুল হয়েছিলেন, সে কথা আমি বলতে পারব না।

৬২