মধ্যে যুগোপযোগী নূতনত্ব আনবার চেষ্টা হয়েছিল, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে এই ছউ নাচ। তবে সে সত্য বহু দিন পর্যন্ত সকলের অগোচরে থেকে গিয়েছিল চক্ষুষ্মান সমালোচকের অভাবে।
ছউ নাচের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও প্রতিপালক হচ্ছেন সেরাইকেলার রাজা শ্রীআদিত্যপ্রতাপ সিং দেও বাহাদুর। নাচ দেখবার পর তাঁর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হ’ল। আমি বললাম, “রাজাসাহেব, সেরাইকেলার এমন একটা অপূর্ব অবদানের কথা বাইরের লোক জানে না। দুঃখের বিষয়, তাঁদের জানাবার জন্যে কোন উল্লেখযোগ্য চেষ্টাও হয়নি।”
সেখানে আরো কেউ কেউ উপস্থিত ছিলেন। কে একজন বললেন, “এ নাচকে আমরা সেরাইকেলার নিজস্ব ব’লে মনে করি। একে দেশের বাইরে নিয়ে গেলে আরো অনেকেই এর নকল করতে পারে।” অর্থাৎ তাঁর ধারণা, সাত নকলে আসল খাস্তা হওয়ার সম্ভাবনা।
ভারতবর্ষে আর্টের কোন কোন ক্ষেত্রে এই রকম সংকীর্ণ মনোবৃত্তি পোষণ করা হয়—বিশেষ ক’রে “ক্লাসিকাল” সঙ্গীতকলার। ওস্তাদরা সঙ্গীতের বিশেষ বিশেষ গুপ্তকথা বাইরে কারুর কাছে ব্যক্ত করতে চাননি, তা জানতে পেরেছে বংশানুক্রমে কেবল তাঁদের উত্তরাধিকারীরাই।
পরমাণু–বোমার নির্মাণপদ্ধতি লুকিয়ে রাখা উচিত, কারণ তা সুলভ হ’লে পৃথিবী থেকে মনুষ্যজাতি লুপ্ত হয়ে যেতে পারে। কিন্তু ললিতকলা করে বিশ্বের কল্যাণসাধন। যা সর্বজনভোগ্য, তাকে সংকীর্ণ গণ্ডীর মধ্যে বন্দী রাখা স্বার্থপরতা।
উপরন্তু অনুকরণের দ্বারা শ্রেষ্ঠ আর্টের মহিমা কোনদিনই ক্ষুন্ন হয়নি। অননুকরণীয় হচ্ছেন কাব্যে রবীন্দ্রনাথ, চিত্রে অবনীন্দ্রনাথ, অভিনয়ে শিশিরকুমার, নৃত্যে উদয়শঙ্কর প্রভৃতি। অনুকারীরা যখনই এঁদের অবলম্বন করেছেন, হাস্যাস্পদ ছাড়া আর কিছুই হ’তে পারেননি। পরে আমি ছউ নাচেরও (‘শ্রীদুর্গা’ নৃত্যের) অনুকরণ দেখেছি। কিন্তু সে অনুকৃতি দেখে আমার মনে পড়েছে চেরাগের তলায় অন্ধকারের কথা।
৬৮