পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সেরাইকেলার রাজাসাহেৰ

 হরেন ঘোষের চেষ্টায় অবশেষে রাজা আদিত্যপ্রতাপের মত পরিবর্তন হয়। সেরাইকেলার নির্মোক ভেঙে ছউ নাচ প্রথমে কলকাতায় আসে এবং তারপর যায় য়ুরোপেও।

 সেরাইকেলার যে প্রতিবেশের মধ্যে ছউ নাচ অনুষ্ঠিত হয়, দেশের বাইরে গিয়ে তাত্থেকে তাকে বঞ্চিত হ’তে হয়েছিল। ছউ নাচের স্বাভাবিক আসর হচ্ছে যাত্রার আসরের মত, শিল্পীদের চারিদিকেই দর্শকরা আসন গ্রহণ করে মণ্ডালাকারে। আধুনিক নাচঘরের অপ্রশস্ত আবেষ্টনের মধ্যে তার আবেদন ও স্বাধীনতা কতকটা ক্ষুণ্ণ না হয়ে পারে না। কিন্তু তবু এখানে এবং পাশ্চাত্য দেশেও ছউ নাচ দেখে সবাই তুলেছিল ধন্য ধন্য রব। তাইতেই বোঝা যায় তার আবেদন হচ্ছে সার্বজনীন এবং তাকে প্রাদেশিক নৃত্য ব’লে গণ্য করা যেতে পারে না। আমাদের অধিকাংশ প্রাদেশিক নৃত্য সম্বন্ধে এমন কথা বলা যায় না। জন্মভূমির—বিশেষতঃ ভারতের-বাইরে গেলে তাদের পক্ষে জনপ্রিয়তা অর্জন করা কঠিন হয়ে উঠবে। কারুর প্রধান ভাষা হচ্ছে মুদ্রা, কারুর ভঙ্গী এবং কারুর বা নূপুরের বোল। যারা অধ্যবসায় সহকারে সে সব ভাষা শেখেনি, তাদের কাছে মাঠে মারা যায় নাচের সৌন্দর্য।

 ছউ নাচ একটি বারংবার প্রমাণিত সত্যকে প্রমাণিত করেছে পুনর্বার। ললিতকলার মাধ্যমে কেবল ব্যক্তিবিশেষের নয়, কোন অজানা দেশ বা জাতিও প্রখ্যাত হয়ে উঠতে পারে। পনেরো বৎসর আগে ক্ষুদ্র রাজ্য সেরাইকেলার নাম জানত কয়জন? কিন্তু ছউ নাচের প্রসাদে সেরাইকেলার নাম আজ ভারতের সর্বত্র এবং য়ুরোপেও সুপরিচিত হয়ে উঠেছে। একেই বলতে পারি সাংস্কৃতিক দিগ্বিজয়।

 রাজা আদিত্যপ্রতাপ এবং তাঁর কনিষ্ঠ সহোদর স্বর্গীয় বিজয়প্রতাপের তত্ত্বাবধানে যে সব ছউ নৃত্য পরিকল্পিত হয়েছে, সংখ্যায় সেগুলি অসামান্য। ভারতনাট্যম্ ও কথাকলির নৃত্যসংখ্যা আমি জানি না, কিন্তু যে বিশ্ববিখ্যাত রুসীয় নৃত্য-সম্প্রদায় পৃথিবীভ্রমণ করেছিল, তার চেয়ে ছউ নাচের সংখ্যা অনেক বেশী। ১৯৩৮ খৃষ্টাব্দে সেরাইকেলা নৃত্য-সম্প্রদায় মোট একচল্লিশটি নাচ নিয়ে গিয়েছিল ইতালী, ফ্রান্স ও ইংলণ্ডে। কিন্তু সেরাইকেলার নৃত্য-

৬৯