তালিকা এর চেয়ে ঢের বেশী দীর্ঘ— বোধ করি শতাধিক হবে।
সাধারণত রাজা-মহারাজারা নিজেরাও শিল্পী হবার জন্যে আগ্রহপ্রকাশ করেন না, তাঁরা হন নানা কলাবিদ্যার পৃষ্ঠপোষকমাত্র। শিল্পীদের উৎসাহ দেন, অর্থ সাহায্য করেন, তার বেশী আর কিছু নয়। কিন্তু সেরাইকেলা নৃত্য-সম্প্রদায়ের মধ্যে রাজা এবং রাজবংশীয় অন্যান্য ব্যক্তিগণ শিল্পীরূপেই যোগদান করেন। আদিত্যপ্রতাপ কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্র নন, নিজেও একজন নৃত্যশিল্পী এবং চিত্রবিদ্যাতেও সুনিপুণ। বিশেষজ্ঞ সমালোচকরা জানেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের দ্বারা যে সব মুখোস গঠিত ও চিত্রিত হয়েছে, ললিতকলায় তা উচ্চ স্থান অধিকার ক’রে আছে। সেরাইকেলার নর্তকরা নাচের সময়ে মুখোস ব্যবহার করেন। অধিকাংশ মুখোসই রাজা আদিত্যপ্রতাপের নিজের হাতেই তৈরি। বিভিন্ন রসাশ্রিত নৃত্যনাট্যের পাত্র-পাত্রীদের চারিত্রিক বিশেষত্ব সেই সব মুখোসের উপরে ফুটে উঠেছে যথাযথ বর্ণের আলেপনে ও তুলির টানে চমৎকার ভাবে।
রাজভ্রাতা স্বর্গীয় কুমার বিজয়প্রতাপও ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী এবং উড়িয়া ভাষার একজন সুলেখক। তিনি কবিতা, নাটক ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তিনি ছিলেন রাজাসাহেবের দক্ষিণ হস্তের মত। সেরাইকেলার অধিকাংশ নৃত্যনাট্য পরিকল্পনা ও রচনা করেছেন তিনিই এবং সেই সঙ্গে নিয়েছেন নাচ শেখাবারও ভার।
স্বর্গীয় কুমার শুভেন্দ্রনারায়ণ ছিলেন রাজাসাহেবের পুত্র ও সম্প্রদায়ের প্রধান শিল্পী। তাঁর মধ্যে ছিল প্রথম শ্রেণীর নৃত্যপ্রতিভা। শুভেন্দ্রনারায়ণের নাচ দেখে বিলাতের সমালোচক উদয়শঙ্করের সঙ্গে তাঁর তুলনা করেছিলেন। তাঁর রাধাকৃষ্ণ, ময়ূর, চন্দ্রভাগা, দুর্গা, নাবিক ও সাগর প্রভৃতি অমৃতায়মান নাচের কথা কখনো ভুলতে পারব না। আজ তিনি অকালে গিয়েছেন পরলোকে, কিন্তু আজও মনের মধ্যে জীবন্ত হয়ে আছে নৃত্যপর শুভেন্দ্রনারায়ণের লীলায়িত মূর্তি।
রাজাসাহেবের আরো দুই নৃত্যপটু পুত্র নৃত্যনাট্যে বিভিন্ন ভূমিকা গ্রহণ করেন। এই রাজবংশের আর এক অসাধারণ নৃত্য-
৭০