পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
এখন যাঁদের দেখছি

 কবির রোগশয্যার পার্শ্বেই আবার দেখা পেলুম বাল্যবন্ধু মোহিতলালের।

 তীর্থযাত্রীর মত প্রায় প্রত্যহই যেতুম দেবেন্দ্রসদনে। প্রতিদিন না হোক, প্রায়ই সেখানে মোহিতলালের সঙ্গে দেখাশুনো হ’তে লাগল, এবং অবিলম্বেই আবিষ্কার করলুম তিনি তখন হয়েছেন কাব্যগতপ্রাণ। কেবল কবিতা-পাঠক নন, কবিতা-লেখকও—যদিও সাময়িক পত্রিকায় তাঁর কোন কবিতা তখনও আমার চোখে পড়েনি। তিনি নিজেই স্বলিখিত কবিতা পাঠ ক’রে শোনালেন। ভালো লাগল।

 দিনে দিনে জ’মে উঠল আমাদের আলাপ, দৃঢ়তর হ’ল আমাদের মৈত্রীবন্ধন। দেখা হ’লেই কবিতার প্রসঙ্গ, সময় কাটে কাব্যালোচনায়। কোন কোন দিন এক সঙ্গেই যাই কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচী বা কবি করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। সেখানেও হ’ত নতুন নতুন কবিতা শোনা, উঠত স্বদেশী-বিদেশী নানা কবি ও কবিতার প্রসঙ্গ। জীবন হয়ে উঠেছিল কবিতাময়। দু’জনের কেহই তখনও সংসারে লব্ধপ্রবেশ হ’তে পারিনি, কারুকেই ঝড়-ঝাপটাও সহ্য করতে হয়নি, তাই এটা আমাদের ধারণার বাইরে থেকে গিয়েছিল যে, কবিতা যতই মহত্তম হোক, জীবনের যাত্রাপথে তাকে সম্বল ক’রে পথ চলতে হলে যথেষ্ট বিড়ম্বনার সম্ভাবনা আছে। মোহিতলালের মনের কথা বলতে পারি না, তবে নিজে আমি এ সত্যটি উপলব্ধি করেছি বহু বিলম্বে, অত্যন্ত অসময়ে। তিনকাল গিয়ে যখন এক কালে ঠেকে, তখন আর কেঁচে গণ্ডুষ করা চলে না।

 “যমুনা” পত্রিকার কার্যালয়ে বসল আমাদের বৃহৎ আসর। ঔপন্যাসিক শরৎচন্দ্রের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে বৈঠক হয়ে উঠল জমজমাট। সেখানেও সর্বদাই কাব্যকৌমুদীতে মন হয়ে থাকে প্রসন্ন। নিয়মিতভাবে আসা-যাওয়া করেন মোহিতলাল। তাঁর লেখনীও কবিতা প্রসব করে ঘন ঘন। তিনি কেবল লিখেই তুষ্ট থাকতে পারেন না, স্বরচিত কবিতা অপরকে শোনাবার জন্যেও আগ্রহ তাঁর উদগ্র। হয়তো সন্ধ্যা উৎরে গিয়েছে। কলকাতার পথে গ্যাসের আলো জ্বলেছে। মোহিতলাল চলেছেন পদব্রজে। তাঁর পকেটে আছে একটি নূতন কবিতা। বুঝি সেটি তখনও কারুকে শোনানো

৭৪