পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
এখন যাঁদের দেখছি

হয়নি। হঠাৎ এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা। মোহিতলাল অমনি ফুটপাথের উপরে একটা গ্যাসপোস্টের তলায় দাঁড়িয়ে পড়লেন। তারপর সেই জনাকীর্ণ পথকে গ্রাহ্যের মধ্যে না এনেই বন্ধুকে সামনে রেখে কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলেন।

 “যমুনা” পত্রিকা উঠে গেল। সেখানেই বসল সাপ্তাহিক সাহিত্যপত্রিকা “মর্মবাণী”র বৈঠক। সভ্যের সংখ্যা আরো বেড়ে উঠল। এলেন কথাশিল্পী মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়, এলেন কবিবর সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। নাটোরের মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ রায়ও আসতেন মাঝে মাঝে। করুণানিধান ও অন্যান্য কবিরাও আসতেন। সেইখানেই শ্রীকালিদাস রায়কেও প্রথম দেখি। মোহিতলাল আসতেন। তিনি তখন উদীয়মান কবি হিসাবে সুপরিচিত হয়েছেন।

 অধিকাংশ বাংলা পত্রিকাই দীর্ঘজীবন লাভের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে না। খোঁটার জোর থাকলেও অকালমৃত্যু তাদের ছিনিয়ে নেয়। আমাদের সাময়িক সাহিত্যের ইতিহাস হচ্ছে ঘন ঘন জন্ম ও মৃত্যুর ইতিহাস। নাটোরাধীশের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ ক’রেও “মর্মবাণী” আত্মরক্ষা করতে পারলে না। এক বৎসর পরে মাসিক “মানসী”র সঙ্গে মিলে কোন রকমে তখনকার মত মানরক্ষা করলে। এখন “মানসী ও মর্মবাণী”ও অতীতের স্মৃতি।

 “ভারতী” সম্পাদনার ভার গ্রহণ করলেন মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁকে সাহায্য করবার জন্যে আহূত হলুম আমি। “ভারতী” কার্যালয়েই বসল আমাদের নতুন বৈঠক—রবীন্দ্রনাথের ভক্ত না হ’লে সেখানে কেউ বৈঠকধারী হ’তে পারতেন না। সেখানেও মোহিতলাল যোগ দিলেন আমাদের দলে। এই সময়েই তাঁর কবিতাপুস্তক “স্বপনপসারী” প্রকাশিত হয়।

 মোহিতলাল আধুনিক কবি হ’লেও এবং তিনি আধুনিক যুগধর্মকে স্বীকার করলেও, তাঁর কবিতার মূল সুরের মধ্যে পাওয়া যাবে পুরাতন যুগেরই প্রতিধ্বনি। কি পদ্যে এবং কি গদ্যে তাঁর ভাষাও মেনে চলে অতীতের ঐতিহ্য। তথাকথিত নূতনত্ব দেখাতে গিয়ে কোথাও তিনি যথেচ্ছাচারকে প্রশ্রয় দেন না। এই নূতনত্বের মোহে একেলে অনেকের কবিতা হয়ে ওঠে রীতিমত উদ্ভট।

৭৫