পালিত কবে ইহলোক ত্যাগ করেন, সে খবর পর্যন্ত কোন কাগজেই স্থান পায়নি।
১৯১৬ খৃষ্টাব্দ। শুনলুম মনোমোহন থিয়েটারে একখানি ঐতিহাসিক নাটকের অভিনয় দেখবার জন্যে কাতারে কাতারে লোক ভেঙে পড়ছে। কৌতূহলী হয়ে দেখতে গেলুম। কিন্তু পুরো এক অঙ্ক পর্যন্ত অভিনয় দেখতে পারলুম না—যেমন নিকৃষ্ট নাট্যকারের রচনা, তেমনি প্রাণহীন অভিনয়! দানীবাবু পর্যন্ত নূতন কোন চরিত্র সৃষ্টির চেষ্টা না ক’রে নিজের পূর্বসঞ্চিত পণ্যের (Stock-in-trade) ভিতর থেকে বেছে বেছে যে কলকৌশলগুলি প্রয়োগ ক’রে গেলেন, তা ঘন ঘন হাততালির দ্বারা অভিনন্দিত হ’ল বটে, কিন্তু তার প্রত্যেকটিই ছিল আমার কাছে সুপরিচিত। বিতৃষ্ণা ভরা মন নিয়ে প্রকাশ্যে নাটক ও অভিনয়ের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ ক’রে প্রেক্ষাগার ছেড়ে বেরিয়ে এলুম। মজা দেখলুম এই, জনপ্রাণীও আমার বিরদ্ধে সমালোচনার প্রতিবাদ করলে না।
মনোমোহন থিয়েটারের পরেই লোকপ্রিয় ছিল তখন মিনার্ভা থিয়েটার। সেখানে আমার রচিত একখানি নাটিকা অভিনীত হয়েছিল। সেই সূত্রে আমি প্রায়ই রঙ্গমঞ্চের নেপথ্যে আনাগোনা করতুম। অবিলম্বে একখানি নূতন নাটকের মহলা শুরু হবে শুনলুম। একদিন গিয়ে দেখলুম নূতন পালার আপন আপন ভূমিকা নিয়ে মিনার্ভার দুইজন বিখ্যাত নট পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা করছেন। একজন আর একজনকে ডেকে বললেন, “ওহে, পার্ট নিয়ে তোমাকে মাথা ঘামাতে হবে না। তুমি তো অমুক পালায় অমুক পার্ট করেছ। এ পার্টটাও তারই মত। সেই পার্টটার মত ক’রে এটা ছ’কে নিলেই চলবে।”
কথা শুনে বিস্মিত হলুম। সত্যিকার অভিনেতারা এক একটি পুরাতন ভূমিকাও নূতন নূতন ধারণা (Conception) অনুসারে প্রস্তুত ক’রে তুলতে চেষ্টা করেন, আর এ’রা পুরাতন ভূমিকার ছাঁচে ফেলেই তৈরি করতে চান নূতন ভূমিকা!
আসল কথা, তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিনেতার স্বাধীন মস্তিষ্কের সঙ্গে থাকত না অভিনয়ের সম্পর্ক। ধরা-বাঁধা নির্দিষ্ট
৮১