পদ্ধতিতে সকলে কাজ করে যেতেন কলের পুতুলের মত। যে সব নাটকের চরিত্র, ভাব ও ভাষা হ’ত সম্পূর্ণ অভিনব, তখনকার বেশীর ভাগ অভিনেতার কাছেই তা হয়ে উঠত অত্যন্ত গুরুপাক।
এই জন্যেই নব্য বাংলার সুধীসমাজের সঙ্গে গিরিশোত্তর যুগের বাংলা রঙ্গালয়ের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠবার সুযোগ হয়নি। শিক্ষিত ও সুরসিক দর্শকরা যে বাংলা রঙ্গালয়কে একেবারেই বয়কট করেছিলেন এমন কথা বলতে পারি না। কিন্তু দলে হাল্কা ছিলেন তাঁরা এবং দলে ভারি ছিল সেখানে প্রাকৃতজনরাই। প্রায় ১৯২১ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা রঙ্গালয়ের অবস্থা ছিল অল্পবিস্তর একইরকম। এ অবস্থা যে হঠাৎ পরিবর্তিত হবে, এমন কোন লক্ষণ দেখা যায়নি তখন পর্যন্ত।
এই সময়ে কলকাতার ওল্ড ক্লাব নামক সৌখীন নাট্য প্রতিষ্ঠান থেকে স্টার থিয়েটারে একটি সাহায্য রজনীর আয়োজন হয়। সৌখীন শিল্পীদের উপরে আমার বিশেষ শ্রদ্ধা ছিল না। তবু উপরোধে প’ড়ে একখানি টিকিট কিনি। শুনলুম য়ুনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটের শিশিরকুমার ভাদুড়ী “পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস” নাটকে ভীম ও বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন। প্রফেসরররূপে তাঁর খ্যাতি আগেই আমার কাণে গিয়েছিল এবং লোকের মুখে মুখে শুনতুম, তিনি নাকি ভালো অভিনয় করেন। কিন্তু অতি-সেকেলে পৌরাণিক নাটক “পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাসে” একজন আধুনিক অধ্যাপক এমন কি স্মরণীয় অভিনয় করবেন, সেটুকু ধারণায় আনতে পারলুম না।
যবনিকা উঠল। দেখা গেল প্রথম দৃশ্য। গোড়া থেকেই দৃষ্টি হয়ে উঠল সচকিত, তারপর ক্রমে ক্রমে যা দেখতে ও শুনতে লাগলুম, আমার কাছে ছিল তা একেবারেই অভাবিত ব্যাপার! সেকেলে নাটক “পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস” কে মনে হ’ল আনকোরা নতুনের মত। অভিনেতাদের চেহারাই খালি সুন্দর নয়, প্রত্যেকের ভাব, অঙ্গভঙ্গী, সংলাপ—এমন কি প্রবেশ ও প্রস্থানের পদ্ধতি পর্যন্ত কল্পনাতীতরূপে অভিনব। কোথাও বহু পরিচিত কৃত্রিম থিয়েটারি ঢং নেই, প্রয়োগকৌশলেও প্রভূত স্বাতন্ত্র্য্য। এরকম উপভোগ্য বিস্ময়ের জন্যে
৮২