আদৌ প্রস্তুত ছিলাম না, আমার অবস্থা হ’ল আকাশ থেকে সদ্যপতিতের মত।
আর একটা ব্যাপার সেইদিনই লক্ষ্য করলুম। বাল্যকাল থেকেই অভিনয় দেখে আসছি। কিন্তু বাংলা রঙ্গালয়ে কোনদিনই কোন পালাতেই প্রত্যেক নট-নটীকে সমানভাবে একসঙ্গে আপন আপন ভূমিকার উপযোগী অভিনয় করতে দেখিনি। এমন কি যে পালায় গিরিশচন্দ্র ও অর্ধেন্দুশেখর প্রভৃতি অতুলনীয় অভিনেতারা থাকতেন, সেখানেও অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ও অপ্রধান ভূমিকাগুলির অভিনয় প্রায়ই হ’ত নিতান্ত নিম্নশ্রেণীর। তাই দেখে দেখে আমরা এমন অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলুম যে, কৌতুক বোধ করলেও অসুবিধা বোধ করতুম না। লোকে তখন এক একজন বিখ্যাত ব্যক্তির উচ্চশ্রেণীর অভিনয় দেখলেই পরিতুষ্ট হ’ত, ছোট ছোট ভূমিকা নিয়ে কিছুমাত্র মাথা ঘামাত না।
কিন্তু “পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাসে”র সেই সৌখীন পুনরভিনয়েই বাংলা রঙ্গালয়ে প্রথম দেখলুম, নাট্যাভিনয়ে প্রত্যেকেই—এমন কি মূক দৌবারিকটি পর্যন্ত ভূমিকার উপযোগী নিখুঁত অভিনয় ক’রে গেল। এও এক আশ্চর্য অগ্রগতি। শিশিরকুমারের যে কোন নাট্যানুষ্ঠানে আজ পর্যন্ত এই বিশেষত্ব লক্ষ্য করা যায়। আগে আর কেউ এদিকে সমগ্রভাবে দৃষ্টি দেননি। কেবল অর্ধেন্দুশেখর এদিকে দৃষ্টি রাখবার চেষ্টা করতেন বটে, কিন্তু সে চেষ্টাও সম্পূর্ণরূপে সুফল প্রসব করতে পারত না। কিন্তু তাঁরও একটি বিশেষ দুর্বলতা ছিল। গিরিশচন্দ্রের উক্তি থেকে জানতে পারি, অনেক সময়ে তিনি বড় বড় ভূমিকাকে অবহেলা ক’রে ছোট ছোট ভূমিকা নিয়েই ব্যস্ত হয়ে থাকতেন।
“পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাসে”র সেই অভিনয়ে শিশিরকুমার যে প্রথম শ্রেণীর কলাকুশলতা প্রকাশ করলেন, এতদিন পরে তা নিয়ে আর বিশেষ আলোচনা না করলেও চলবে। কেবল এইটুকু বললেই যথেষ্ট হবে যে, ভেবেছিলুম দেখব কোন নবীন শিক্ষার্থীকে, কিন্তু গিয়ে দেখলুম এক প্রতিভাবান ওস্তাদকে। তারপর সেইদিনই খবর পেলুম, সৌখীন শিল্পিরূপে এই হচ্ছে শিশিরকুমারের শেষ
৮৩