বিতর্কের বৎসরগুলি মিজুরি চুক্তি (Missouri Compromise) প্রত্যাহারের স্বপক্ষে প্রধান যুক্তি এখনও দেওয়া হয় নাই। সেই যুক্তি হইল “স্বায়ত্বশাসনের পবিত্র অধিকার।” মনে হয়। সেনেটেও আমাদের মাননীয় সেনেটর বর্তাহার প্রতিপক্ষীয়গণকে এই যুক্তির সদুত্তরদানে প্ৰবৃত্ত করিতে বিশেষ বেগ পাইয়াছেন । কোন কবি বলিয়াছেন, “দেবদূতগণ যেথায় পদক্ষেপ করিতে ভীত হ’ন নিৰ্বোধের তথায় ছুটিয়া যায়।” আমাকে হয়ত কবি উক্ত নিৰ্বোধ মনে করিতে পারেন, তবুও আমি এই যুক্তির উত্তর দিতেছি—আমি অগ্রসর হইয়া সমস্যাটির সম্মুখীন হইতেছি। আমার বিশ্বাস আমি স্বায়ত্বশাসনের অধিকার কি তাহা বুঝি এবং তাহার যথার্থ মূল্যও দিই। আমার ন্যায়বোধের মূলে রহিয়াছে এই প্রতিজ্ঞার প্রতি আমার বিশ্বাস যে, নিজস্ব ব্যাপারে প্রত্যেক ব্যক্তির আপনি খুন্সীমত কাজ করিবার অধিকার রহিয়াছে। সমষ্টি এবং ব্যষ্টি, উভয় ক্ষেত্রেই আমি এই নীতি মানিয়া চলি। আমি এরূপ করি, কারণ তাহা রাজনৈতিক বিচারে সমীচীন এবং স্বভাবতঃই ন্যায্য ; রাজনৈতিক দিক হইতে সমীচীন এই কারণে যে ইহা অনেক অনাবশ্যক কলহ নিবৃত্ত করে। এখানে অথবা ওয়াশিংটনে আমি কখনই ভাজিনিয়ার ঝিনুক আইন অথবা ইণ্ডিয়ানার লালজাম (cranberry) আইন লইয়া মাথা ঘামাইব না । স্বায়ত্বশাসনের অনুশাসন সঠিক নীতি—সর্বাত্মকভাবে এবং চিরকালের জন্য ইহা সঠিক ; কিন্তু ইহার সঠিক প্রয়োগ হয় নাই। বরং আমার বলা উচিত যে উহার প্রয়োগ সঠিক হইয়াছে কিনা তাহা নির্ভর করে নিগ্রো মানুষ কি না সেই সিদ্ধান্তের উপর। যদি সে মানুষ না হয়, সেক্ষেত্রে কেন তবে, যে ব্যক্তি মানুষ সে তাহার সহিত স্বায়ত্তশাসনের নীতি অনুযায়ী খুন্সীমত ব্যবহার করিবে ? কিন্তু যদি নিগ্রো মানুষই হয়, তবে সে নিজেকে পরিচালনা করিতে পারিবে: না। এ কথা বলা কি স্বায়ত্তশাসনের পূর্ণবিলোপেরই নামান্তর নহে? যখন শ্বেতকায় ব্যক্তি নিজেকে পরিচালনা করে—তখন তাহার নাম স্বায়ত্তশাসন ; কিন্তু যখন সে নিজেকে পরিচালনা করিবার সঙ্গে সঙ্গে অপর একজনকেও শাসন করে তাহা তখন স্বায়ত্তশাসনের গণ্ডী ছাড়াইয়া যায়—তাহা স্বেচ্ছাচার। যদি নিগ্রো মানুষই হয় তবে দেশের সনাতন বিশ্বাসমত আমি তো জানি যে, “সকল মানুষ সমভাবে সৃষ্ট হইয়াছে’ এবং অপরকে ক্রীতদাস করার কোন নৈতিক অধিকার কাহারও থাকিতে পারে না । বিচারক ডগলাস আমাদের যুক্তিকে প্রায়ই তীব্র ব্যঙ্গ এবং বিদ্রুপ করিয়া বলেন : “নেব্রাস্কার শ্বেতকায় ব্যক্তিরা নিজেদের বিষয় পরিচালনায় পটু ; কিন্তু মুষ্টিমেয় ঘূণ্য নিগ্রোকে শাসন করিবার সামর্থ্য তাহাদের নাই ।” সত্যই আমি নিঃসন্দেহ যে অপরাপর স্থানের সাধারণ লোকদের ন্যায় নেব্রাস্কার জনসাধারণও সমান ক্ষমতার অধিকারী এবং তাহাদের সেই সক্ষমতা চিরকালই থাকিবে । আমি ইহার বিরুদ্ধে বলিতেছি না। আমার বক্তব্য এই যে কোন মানুষই অপরের সম্মতি ব্যতীত তাহাকে [অর্থাৎ সেই অপর লোককে] শাসন করিবার উপযুক্ত হইতে পারে না। › ግ
পাতা:এব্রাহাম লিঙ্কনের বক্তৃতাবলী.djvu/২০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।