প্রেসিডেন্ট রূপে কাৰ্যকাল এই স্থানে—যেথায় প্রজ্ঞা, দেশপ্রেম, নীতিনিষ্ঠতার সমন্বয় ঘটিয়াছিল, যাহা হইতে আমরা যে সকল আচার নিয়মের আশ্রয়ে বাস করি তাহদের সৃষ্টি হয়—এই স্থানে দাড়াইয়া আমার হৃদয় গভীর ভাবাবেগে পূর্ণ হইতেছে। আপনারা অনুগ্রহ করিয়া বালিতেছেন যে দেশের বর্তমান অনিশ্চিত অবস্থায় শান্তি পুনঃ প্রতিষ্ঠার ক্ষমতা আমার হাতেই রহিয়াছে। প্রত্যুত্তরে আমি বলিতে পারি যে আমার রাজনৈতিক মত সম্পূর্ণভাবে, আমার সাধ্যমত এই ভবন হইতে যে সকল মনোভাবের উৎপত্তি হইয়া বিশ্বময় ছড়াইয়া পডিয়াছে, তাহা হইতে গ্ৰহণ করিয়াছি। আমার এমন কোন রাজনৈতিক অনুভূতি নাই যাহা স্বাধীনতার ঘোষণাবাণী হইতে আহত হয় নাই। র্যাহারা এখানে সমবেত হইয়া স্বাধীনতার সেই ঘোষণাবাণী রচনা এবং গ্রহণ করেন তাহারা যে বিপদের সম্মুখীন হইয়াছিলেন আমি প্রায়ই তাহার অনুধ্যান করি। যে সৈন্যবাহিনী এবং সেনাপতিমণ্ডলী সেই স্বাধীনতা অর্জন করিয়াছিল। তাহারা যে কষ্ট সহ্যু করিয়াছিল বারংবার আমি সে সম্পর্কে অনুধ্যান করি। আমি বারংবার নিজেকে প্রশ্ন করি কোন মহান নীতি বা ধারণার বলে এই কনফেডারেসি (Confederacy) এতদিন পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ ছিল ? কেবল মাতৃভূমি হইতে উপনিবেশগুলিকে বিচ্ছিন্নকরণের মধ্যে ইহার মূল ছিল না ; ইহার মূল ছিল স্বাধীনতার ঘোষণাবাণীর সেই সুরে যাহাতে সৰ্বকালের জন্য শুধুমাত্র এই দেশের জনগণকেই স্বাধীনতা দেওয়া হয় নাই, আমার মনে হয়, দেওয়া হইয়াছে সকল বিশ্ববাসীকে। ইহার মূল ছিল সেই আশ্বাসে যে যথাকালে সকল মানুষের স্কন্ধ হইতেই বোঝা তুলিয়া লওয়া হইবে। এই অনুভূতিই স্বাধীনতার ঘোষণাবাণীতে নিহিত রহিয়াছে। এখন, বন্ধুগণ, ইহার ভিত্তিতে এই দেশকে কি বঁাচান যায় ? যদি যায়, তবে আমি ইহাকে বঁচিতে সাহায্য করিতে পারিলে নিজেকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সুখী লোক বলিয়া মনে করিব। ঐ নীতির ভিত্তিতে যদি উহাকে বাঁচান না যায়। তবে তাহা নিতান্তই পরিতাপের বিষয় হইবে । কিন্তু যদি এই নীতি পরিত্যাগ না করিয়া এই দেশকে বাঁচান। সম্ভব না হয়, তবে, আমার মতে, এই নীতিকে বিসর্জন দেওয়া অপেক্ষ এই স্থানে নিহত হওয়া শ্রেয়তরা। এখন আমার মতে বর্তমান পরিস্থিতিতে যুদ্ধ বা রক্তপাতের কোন সুযোগ নাই। ইহার কোন প্রয়োজন নাই। আমি এই পন্থার সমর্থক নাহি এবং পূর্বাহুেই আমি বলিতে চাহি যে সরকারকে বাধ্য না করিলে কোন রক্তপাত হইবে না—গত্যন্তর না থাকিলে আত্মরক্ষার জন্যই সরকারকে ব্যবস্থা অবলম্বন করিতে হইবে । আমার বন্ধুগণ, এই বক্তৃতাটি সম্পূর্ণরূপেই অপ্রত্যাশিত এবং আমি যখন এখানে আসি তখন আমাকে কিছু বলিতে বলা হইবে বলিয়া ভাবি নাই। আমি ভাবিয়াছিলাম পতাকা উত্তোলন সংক্রান্ত কোন অনুষ্ঠানের জন্যই আপনারা আমাকে ডাকিয়াছিলেন। আমি হয়ত বা অনুচিত কিছু বলিয়াছি ; আমি যাহা বলিয়াছি তাহাই আমার জীবনের মূলমন্ত্র এবং সর্বশক্তিমানের যদি সেরূপ অভিপ্ৰায় হয়, তবে, তজ্জন্য জীবনপাতও করিব ।
পাতা:এব্রাহাম লিঙ্কনের বক্তৃতাবলী.djvu/৪০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।