পাতা:এরাও মানুষ - নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় (১৯৫০).pdf/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কশাঘাতে ক্ষেপে ওঠে শান্ত গ্রাম্য নদী। দুই তীর ছাপিয়ে নদীর জল কুল্ কুল্ রবে ছুটতে আরম্ভ করে গাঁয়ের দিকে। ডুবে যায় শস্যক্ষেত, প্রান্তর। অদৃশ্য হয়ে যায় লতা-গুল্ম। প্রমত্ত ঝড় একটি একটি করে, সমস্ত পাতা ছিঁড়ে উপড়ে ফেলে গাছ থেকে, ভেঙ্গে উড়িয়ে নিয়ে যায় ঘরের চাল,···মাথায় হাত দিয়ে ছাদহীন ঘরে বসে বসে ভেজে গৃহস্থরা, নিভে যায় উনুন, ভেঙ্গে পড়ে মাটির দেয়াল, এক হয়ে যায় নদ-নদী, মাঠ আর ঘাট, ঘর আর উঠান; কুকুর, মুরগী, ছাগল, মানুষ, একই অবস্থায় একই ভাবে ঝড়ের নির্দয় খেলার পুতুল হয়ে বসে থাকে।

 সারাদিন, সারা রাত ধ’রে সমানে চল্‌লো সেই ঝড় আর বৃষ্টি। তার পরের দিন দুপুর পর্যন্ত···

 তখন একটু একটু ক’রে ঝড়ের বেগ কমে আসে। কিন্তু বৃষ্টি থামে না। তবে তারও মাত্রা কমে আসে। ঝির ঝির করে গুঁড়ো গুঁড়ো বৃষ্টি সমানে তখনও ঝরতে থাকে।

 মাঠে আর মাটিতে চারিদিকে ছিল যে-সব উঁচু-নীচু রেখা, অথই জলের মধ্যে ডুবে গিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায় সব। আনন্দে গান গেয়ে ওঠে শুধু ব্যাঙের দল। রীতিমত কোরাস্।

 সন্ধ্যের দিকে বৃষ্টি থেমে আসে। যেমন হঠাৎ এসেছিল, তেমনি হঠাৎ আবার থেমে যায়। কখন যে গোধূলি এলো গেল, তা কেউ জানতে পারে না। একেবারে নেমে আসে রাত্রির অন্ধকার।

৫৫