অনন্তর তস্করপতি নিজ অনুচরদিগকে আদেশ করিয়া কহিলেন “দেখ ইহার সঙ্গে এক কপর্দ্দকও নাই কিন্তু ইহার শরীর বিলক্ষণ সবল এবং পরিশ্রমক্ষম, এমন দাস পাইলে অনেকে ক্রয় করিবে, অতএব চল উহাকে সঙ্গে করিয়া লই, যে কয়েক দিবস হাতের ঘাটা আরাম না হয়, আমাদিগের সঙ্গেই থাকুক, পরে কোন গ্রামে লইয়া বিক্রয় করিলেই হইবে”। এইরূপ কর্ত্তব্যতা নির্ধারণ হইলে চোরেরা পথিকের হস্তযুগল তাহার নিজ উষ্ণষ বস্ত্র দ্বারা বন্ধন করত তাহাকে আপনাদিগের মধ্যবর্তী করিয়া লইল।
অতি অল্পক্ষণের মধ্যেই পথিক তাহাদিগের কর্তৃক কতিপয় কুটীর সম্মুখে নীত হইলেন। ঐ সকল কুটীর তস্করদিগের নির্মিত এবং তাহা দিগের পরিজনের আবাস। চোরেরা সেই স্থানে পথিকের নিমিত্ত একটি নূতন কুটীর প্রস্তুত করিয়া দিল। পান্থ বনেচরদিগের সমভিব্যাহারে তিন দিবস যাপন করিলেন। তাহার বাহুর ক্ষত প্রায় শুষ্ক হইয়াছিল, আর দুই চারি দিবসে সম্পূর্ণ সুস্থ হইবার সম্ভাবনা, এমত সময়ে তষ্করেরা একত্র হইয়া তাহাকে সম্মুখীন করিল, এবং তাহাদের অধিপতিদ্বারা কহিতে লাগিল, “শুন পথিক! আমরা তোমার দেহ-শক্তি এবং সাহস দর্শনে পরমাপ্যায়িত হইয়াছি, আমরা চোর বটি, কিন্তু যথার্থগুণের পুরস্কারে পরাউন্মুখ নহি, তোমার পাথেয় দেখিয়া নিতান্ত দুরবস্থা বুঝিয়াছি,অতএব আমরা তোমাকে সমভিব্যাহারী করিতে স্বীকার করিলাম; দেখ আমাদিগের কন্যা কলত্রাদি আছে এবং আমরা বনেচর বলিয়া নিতান্ত ক্লেশে কালযাপন করি না— ইচ্ছা হয়ত আমাদিগের সহিত মিলন কর, নচেৎ পূর্বে যে অভিসন্ধি করিয়াছি অবশ্য তাহাই করিব”। পথিক ঈষৎ হাস্য করিয়া উত্তর করিলেন “তোমা দিগের যাহ ইচ্ছা তাহাই করিবে, আমি কোনক্রমেই অসৎবৃত্তি অবলম্বন করিব না—বরং তোমাদিগকে অগ্রে সাবধান করিতেছি যে, আমাকে কোন রহস্যানুসন্ধান জ্ঞাত করিও না,করিলে, প্রকাশ হইবার সম্ভাবনা জানিবে”। তস্করপতি কহিলেন: —‘আমরা সে ভয় করি না। সাহসী বীরগণ কখন বিশ্বাস হস্ত হইতে পারে না, বিশ্বাস-ঘাতকতা নীচ-প্রকৃতি ভীরুগণেরই ধৰ্ম”। পথিক কহিলেন “তোমরা সে আশা পরিত্যাগ কর, চোর ও দস্যুপ্রভৃতি যে সকল দুরাত্মা মনুষ্যমাত্রেরই অপকারক, তাহাদিগকে ব্যাঘ্র ভল্লুকাদির ন্যায় উচ্ছেদ