আলেপ্ত্ধগীন রাজার একটী পরমানুন্দরী কন্যা ছিল। কন্যার যাদৃশ লাবণ্য-মাধুরী তাঁহার গুণও তাদৃশ ছিল। অতএব দেশীয় এবং বৈদেশিক আঢ্য কুলীন সস্তানগণ তাহার পাণি গ্রহণাভিলাষে আসিয়া নিরস্তর উপাসনা করিত। কিন্তু রাজকন্যা উপাসনার বশ ছিলেন না। তিনি ক্রমে ক্রমে সকল বিবাহার্থীকেই বিদায় করিয়া অনুঢ়াবস্থায় কালযাপন করিতে লাগিলেন। রাজার অন্য অপত্য ছিল না। কেবল সেই একমাত্র কন্যা। সুতরাং কন্যা বিবাহে সম্মতা হইয়া উপযুক্ত বরপাত্র গ্রহণ করেন, এমত একান্ত বাসনা থাকিলেও কন্যার অনভিমতে তাহার বিবাহ সম্পন্ন করণে ইচ্ছা করিতেন না।
প্রধান মন্ত্রীকে সর্বদাই রাজবাটীর অভ্যন্তরে গমন করিতে হইত। সেই সকল সময়ে রাজকন্যার সহিত তাহার সাক্ষাৎ এবং কথোপকথন হইত। এইরূপে ক্রমে ক্রমে তাহাদের উভয়েরই মানসে প্রণয়ের সঞ্চার হইয়া উঠিল এবং দিন দিন উভয়েই উভয়ের গুণ পরিচিত হইয়া পরস্পর অধিকতর নৈকট্য বাসনা করিতে লাগিলেন। আন্তরিক ভাবমাত্রই নয়ন দ্বারা বিলক্ষণ প্রকাশমান হয়। বিশেষতঃ প্রকৃত অনুরাগের অস্কুরোদয় হইলে প্রণয়িযুগলের প্রীতি-প্রফুল্লনেত্র এমত রমণীর, সমেহ, সতৃষ্ণদৃষ্টি ধারণ করে যে, দেখিবামাত্রই পরস্পরের মন বিকসিত হইয়া উঠে, এবং কথা না কহিলেও তাদৃশ নয়নদ্বারাই মনোগত সমুদায় ভাব ব্যক্ত হইয়া যায়। একদিন প্রধান মন্ত্রী রাজনন্দিনীর সহিত কথোপকথন কালে তাহার ঐরূপ দৃষ্টি নিরীক্ষণ করিয়া আপন মানস ব্যক্ত করণের সাহস প্রাপ্ত হইলেন। তিনি কি বলিলেন, এবং গুণবতী জেহীরা কি উত্তর করিবেন তাহা বর্ণন করা অসাধ্য। যথার্থ প্রণয়ের আবির্ভাবে শুদ্ধাত্মা মানবের চিত্ত যে কত প্রকার রমণীয় গুণধারণ করে তাহা কে বলিতে পারে? তখন শরীরের জড়তা অপগত হয়, অন্ত:করণের অসাধুতা দূরীভূত হয়, জিহবাগ্রে সরস্বতী নৃত্য করেন, এবং সর্বতোভাবে আত্ম-বিস্তৃতি উপস্থিত হওয়াতে অন্তরিন্দ্রীয়গণ পরোক্ষ দৃষ্টির প্রথম সোপান অবলম্বন করে। আহা! জগদীশ্বর যে প্রীতি-পদার্থকে পরসুখের প্রধান বর্ত্ম করিয়া দিয়াছেন, অজিতেন্দ্রিয় মানবগণ নিরষ্কশ রিপুগণ কর্তৃক